বন্যায় পল্লীবিদ্যুতের সেবায় খুশি শান্তিগঞ্জের মানুষ
ইয়াকুব শাহরিয়ার, ইয়াকুব শাহরিয়ার,
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঈদুল আজহার রাত থেকে শান্তিগঞ্জ উপজেলায় পানি বাড়তে শুরু করে। ঈদের দিন থেকে প্লাবিত হয় উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট। বেগতিক অবস্থায় প্রথম দিন বিদ্যুৎ না থাকলেও পরের দিন থেকে বিদ্যুৎ সেবা চালু করে শান্তিগঞ্জ উপজেলা পল্লীবিদ্যুত সমিতি। মাঝে মাঝে লোডশেডিং হলেও বন্যার সময় বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করে বিদ্যুত সেবা চালু রেখেছে উপজেলার পল্লীবিদ্যুত বিভাগ। তাদের এমন সেবায় খুশি উপজেলাবাসী। তারা জানান, বিদ্যুতের প্রসংশা করতেই হয়। বন্যার পানিতে সমস্ত উপজেলা প্লাবিত। তবু সর্বোচ্চ বিদ্যুত দেওয়ার চেষ্টা করছেন বিদ্যুতের লোকজন। তাদেরকে ধন্যবাদ। তবে শিমুলবাক ইউনিয়নে বন্যার পানি নেই বললেই চলে। এখানে বিদ্যুত কম পাওয়া যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ইউনিয়নের বাসিন্দারা।
উপজেলার সবক’টি ইউনিয়নের পল্লীবিদ্যুতের গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণের কারণে ঈদের দিন রাত থেকে শান্তিগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্তিতির সৃষ্টি হয়েছে। রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। অনেকের ঘরবাড়িও প্লাবিত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ঈদের দিন ও তার পরের দিন বিকাল পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিলো না উপজেলাব্যাপী। মঙ্গলবার রাতে বিদ্যুত আসে কোনো কোনো এলাকায়। এরপর থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুত সরবরাহ করা হচ্ছে। যদিও লোডশেডিং হচ্ছে তবু বৈরি আবহাওয়ায় বিদ্যুত পেয়ে খুশি গ্রাহকরা। জানা যায়, উপজেলার জয়কলস, পাথারিয়া, পশ্চিম বীরগাঁও, পূর্ব বীরগাঁও, পশ্চিম পাগলা, পূর্ব পাগলা ও দরগাপাশা ইউনিয়নে এই বন্যা ও বৈরি আবহাওয়ার মধ্যেও কমবেশি বিদ্যুৎ ছিলো। এতে মোবাইল ফোন, রিচার্জেবল লাইট চার্জ করা গেছে। এতে যোগাযোগ কিছুটা স্বাভাবিক ছিলো বা আছে। তবে ফোন নেটওয়ার্ক কোম্পানির নেটওয়ার্ক সার্ভিস খুবই বাজে ছিলো বলে জানিয়েছেন গ্রাহকরা।
পল্লী বিদ্যুৎ সূত্রে জানা যায়, ঈদের দিন ভোর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত যে বৃষ্টিপাত ও প্রচণ্ড বজ্রপাত হয়েছিলো তাতে ৩৩ হাজার কেভি লাইনের ইনস্যুলেটর ফেটে গিয়েছিলো। এজন্য ওইদিন বিদ্যুত সরবরাহ সম্ভব হয়নি। এগুলো কোন কোন জায়গায় ফল্ট করেছিলো তা খোঁজে বের করে সমাধান করে বিদ্যুত চলাচল স্বাভাবিক করা হয়েছে।
পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের ব্যবসায়ী হাকিম প্রহ্লাদ দেবনাথ, পশ্চিম বীরগাও ইউনিয়নের হাফিজ মো. রুবেল আহমেদ, পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়নের সমাজকর্মী ছাদিকুর রহমান বাচন, দরগাপাশা ইউনিয়নের লেখক আবদুর রহমান জামী, দলিল লেখন ছালিক আহমদ ও পূর্ব পাগলা ইউনিয়নের মিজানুর রহমান মিজান বলেন, বাইশের বন্যায় আমরা পুরোপুরি বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন ছিলাম। এ বন্যায় অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে ঠিক কিন্তু বিদ্যুত পাওয়া যাচ্ছে। আমরা দেখেছি বিদ্যুতের লোকজন পানিতে ভিজে হাওরে গিয়ে কাজ করছেন। যদিও এটা তাদের কর্তব্য তবুও এমন দুর্যোগে এসব কাজের জন্য তারা প্রসংশার দাবিদার। গ্রাহক হিসেবে আমরা তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। এমন সেবা আমরা আগামীতেও প্রত্যাশা করি।
তবে শিমুলবাক ইউনিয়নের দুই বাসিন্দা পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক মাহবুব ইসলাম ও ছালেক আহমদ বলেন, আমাদের ইউনিয়নে তেমন বন্যা হয়নি। তবুও আমাদের গ্রামে বিদ্যুত কম পাই। মাঝে মাঝে বিদ্যুতের লোকজনের সাথে যোগাযোগ করেও তেমন কোনো সাড়া পাওয়া যায় না।
শান্তিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের ইঞ্জিনিয়ার জিতেন চন্দ্র পাল ও লাইন টেকনিশিয়ান মোকসেদুল মোমিন বলেন, গ্রাহকদের সেবা দিতে আমরা দিনরাত মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। এই বন্যা-বৃষ্টির মাঝেও নৌকা দিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরে কাজ করছি। হাওরে যাচ্ছি। আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে মানুষকে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতসেবা দেওয়ার।
শান্তিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতের সহকারি জেনারেল ম্যানাজার (এজিএম) ইয়াছিন মাহমুদ ইমরান বলেন, ঈদের দিনও আমরা চেষ্টা করেছি বিদ্যুত দিতে কিন্তু পারিনি। প্রচণ্ড বজ্রপাতের কারণে ৩৩ হাজার কেভি লাইনের বেশ কয়েকটি ইনস্যুলেটর ফেটে গিয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় পানির উচ্চতা বেশি থাকার কারণে এসব জায়গায় দুর্ঘটনা এড়াতে জনস্বার্থে বিদ্যুত বন্ধ রেখেছি। আসামপুর, খাড়ারাই, খুদিরাই, চিকারকান্দি, কাকিয়ারপাড় (নোয়াগাঁও)সহ বেশ কিছু গ্রামে পানির উচ্চতা বেশি। শিমুলবাকের লাইন সুনামগঞ্জ সাব-স্টেশন থেকে চালানো হয়। অনেক দীর্ঘ লাইন। ফল্ট হলে সমস্যা খুঁজে বের করতেই অনেক সময় চলে যায়। আমরা এখানকার সমস্যাও সমাধান করেছি। শিমুলবাকে এখন বিদ্যুত আছে। গ্রাহককে সর্বোচ্চ সেবা দিতে আমরা বদ্ধপরিকর।