সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যাল সূত্রে জানা যায়, চারটি বিভাগে প্রথমবারের মতো ১শ’ ৬০জন শিক্ষার্থীর আসনের বিপরীতে চলতি মাসের ৬-৮ তারিখ পর্যন্ত তিন কর্মদিবসে ১শ’ ৫১জন শিক্ষার্থী ভর্তি নিশ্চিত করেছেন। বাকী ৯ জন ভর্তির জন্য সময় দেওয়া হবে। গণিত, রসায়ন বিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান ও কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল (সিএসই) বিভাগে লেখাপড়া করবেন এসব শিক্ষার্থীরা। বিপরীতে উপাচার্য (ভিসি) ড. মো. শেখ আবু নঈম ছাড়াও শিক্ষক আছেন ১৭ জন। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি ২০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষক থাকলেও সুবিপ্রবিতে প্রতি আছেন প্রতি ১০ জনের বিপরীতে আছেন ১ জন। সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের প্রশাসনিক ভবনের চতুর্থ তলায় শুরু হবে ক্লাস। শিক্ষার্থীদের আধুনিক শিক্ষায় পারদর্শী করে তুলতে রসায়ন, পদার্থ ও সিএসই’র জন্য আছে অত্যাধুনিক ল্যাব। টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের ল্যাবের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপাদান যুক্ত করে আরও স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হয়েছে ল্যাবগুলোকে। শিক্ষার্থীরা এখানে এসে অনেক কিছু শিখতে পারবেন। চলতি জুনের ২ ও ৩ তারিখ দুই দিনে ১৫ জন কর্মকর্তা কর্মচারী যোগ দেন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। তাদের অধিকাংশ জনই সুনামগঞ্জ জেলার স্থায়ী বাসিন্দা বলে জানিয়ে একটি সূত্র। উপাচার্য ও শিক্ষকমণ্ডলী ছাড়া শুধু কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন ২৬ জন। এই জনবল নিয়ে শান্তিগঞ্জ উপজেলায় সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে উত্তর পাশে অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটে কাজ শুরু করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। সূত্র জানায়, সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের উত্তরপাশে দেখার হাওরে ১শ’ ২৫ একর জায়গার উপরে দৃষ্টি নন্দন করে স্থাপিত হবে সুবিপ্রবির নিজেস্ব ক্যাম্পাস। থাকবে জলাধর, পাখিদের বিচরণের ব্যবস্থা, করা হবে পরিবেশ বান্ধব। এসব কথা মাথায় রেখে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টির ডিজাইনও সম্পন্ন করা হয়েছে।
আইনজীবী, লেখক ও গবেষক কল্লোল তালুকদার এবং শাহজালাল মহাবিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক এনামুল কবির বলেন, সুনামগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হচ্ছে এটি সুনামগঞ্জবাসীর জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। নানান চড়াই-উতরাই পার হয়ে অবশেষে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হচ্ছে। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান মহোদয়ের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
বিভিন্ন বিষয়ে উপাচার্যের বক্তব্য:
বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু, শিক্ষার্থী ও আবাসন, ট্রান্সপোর্ট এবং স্থায়ী ক্যাম্পাস বিষয়ে কথা হয় বরেণ্য শিক্ষাবিদ, গণিতজ্ঞ ও সুবিপ্রবির উপাচার্য ড. মো. শেখ আবু নঈমের সাথে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক যাত্রা করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। নিঃসন্দেহে সুনামগঞ্জবাসীর জন্য একটি আনন্দের ও ঐতিহাসিক দিন। আপাতত সুনামগঞ্জ টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের ক্যাম্পাসে অস্থায়ীভাবে যাত্রা শুরু করছি। শোকের মাস আগস্টে আমরা একটি শুভ কাজ শুরু করতে চাই না। তাই ১ সেপ্টেম্বর আমাদের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করার চিন্তা করছি। সব কিছু ঠিক থাকলে ওই দিনেই সবাইকে নিয়ে উদ্বোধন হবে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রমের। ১শ’ ৬০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ক্লাস শুরু হবে। শিক্ষার্থীদের আবাসন বিষয়ে তিনি বলেন, আপাতত শিক্ষার্থীদেরকে আবাসনের কোনো ব্যবস্থা আমরা করতে পারবো বলে মনে হচ্ছে না। তবে মেয়ে শিক্ষারার্থীদের কথা আলাদা করে চিন্তা করছি। ট্রান্সপোর্ট সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেকেই জেলা সদরে থাকাকে বেশ পছন্দ করেন। অনেকে সদরেই থাকবেন। তাদের ব্যপারে এখনই কোনো ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা করা প্রায় অসম্ভব। তবু এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবছি। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। যত দ্রুত সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করবো। নিজেস্ব ক্যাম্পাসের বিষয়ে ড. মো. শেখ আবু নঈম বলেন, দেখার হাওরে ১শ’ ২৫ একর জমিতে ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। দৃষ্টিনন্দন, পরিবেশ বান্ধব একটি বিশ্ববিদ্যালয় হবে বলে আমার বিশ্বাস।
উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো জেলাবাসীর। জনসাধারণের দাবি নিয়ে ব্যপক তৎপরতা দেখান তৎকালীন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান এমপি। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় ২০২০ সালে সুনামগঞ্জবাসীকে সুবিপ্রবি উপহার দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।