অপরিকল্পিত পুকুর খনন: ভাঙছে পাড়, পাগলা-বীরগাঁও সড়কের একাংশ বিলীন হওয়ার শঙ্কা
ইয়াকুব শাহরিয়ার, ইয়াকুব শাহরিয়ার,
নিজস্ব প্রতিবেদক

◾ এলজিইডির দায়সারা কাজ: এলাকাবাসী
◾ ‘মেজারমেন্ট’ অনুযায়ী কাজ হয়েছে: এলজিইডি
শান্তিগঞ্জ উপজেলায় এলজিইডি কর্তৃক অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করার অভিযোগ উঠেছে। এতে উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের পাগলা-বীরগাঁও সড়কের ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামের কসবা বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের অংশে ইতোমধ্যে ভাঙন শুরু হয়েছে। ধ্বসে পড়ছে পুকুরের আরও দু’টি পাড়। পশ্চিম পাগলা ইউনিয়ন ও পূর্ব বীরগাঁও ইউনিয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম এ সড়কের এমন দশায় রীতিমত অস্বস্তিকর অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন ব্রাহ্মণগাঁওবাসীসহ সমস্ত পশ্চিমপাড়া এলাকার মানুষ। ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খনন করার কারণে এমন সংকটময় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে, অপরিকল্পিতভাবে নয়, ‘মেজারমেন্ট’ অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন উপজেলা এলজিইডির উপ-সহকারি প্রকৌশলী মো. সোহরাব হোসেন। তিনি এই পুকুর খনন প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত হেমন্তকালে পুকুর খননের কাজ শুরু করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইড)। শান্তিগঞ্জ উপজেলা কার্যালয়ের অধীনের এ কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ লাখ টাকার বেশি। এক্সেভেটর দিয়ে দীর্ঘ সময় কাজ করে পুকুর খনন করে সরকারি এই সংস্থাটি। বুশরা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এই কাজ করার কথা থাকলেও অন্য একজন ঠিকাদারকে ‘সাব-কন্ট্রাক্ট’ দিয়ে কাজ সম্পন্ন করিয়েছেন বুশরা এন্টারপ্রাইজের মালিক হাবিবুর রহমান হাবিব। পরিপূর্ণ কাজ না হওয়ায় কাজের এমন বেহাল অবস্থা হয়েছে বলে দাবি করছেন এলাকার অসংখ্য মানুষ। এতে প্রচণ্ড ক্ষোভও প্রকাশ করছেন তারা। বলেছেন, এলজিইডি একটি দায়সাড়া কাজ করে দায়মুক্তি নিতে চাইছে।
সোমবার বিকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পাগলা-বীরগাঁও সড়কের ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামের কসবা বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে রাস্তার উত্তর পাশের (পুকুরাংশে) সড়কের নিচে ভিতর থেকে প্রায় ৩ ফুট পরিমান জায়গা থেকে মাটি সরে গিয়েছে। লম্বায় ৩০ থেকে ৩৫ ফুট সড়ক বিপজ্জনক অবস্থায় আছে। এজন্য সড়কের মাঝখানে যে ফাটল দেখা দিয়েছে তা স্পষ্টত দৃশ্যমান। যে কোনো সময় একটি ভারী যান এদিকে গেলে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়াও যে পুকুর খনন করা হয়েছে সে পুকুরের পূর্ব পাড় ও উত্তরপাড় বেগতিতভাবে ভেঙে পড়েছে। শুধুমাত্র পশ্চিম পাড়ে ক্ষতি কিছুটা কম হয়েছে। তবে যদি দ্রুত রক্ষণাবেক্ষণ করা না হয় তাহলে এ পাড়ও ভেঙে পড়তে পারে। পূর্বপাড়ের রাস্তাটি বৈশাখ মাসে নাগডড়ার হাওর থেকে ধান আনা নেওয়ার কাজ করা হয়। এবছরও প্রচুর ধান এ পথ দিয়ে তুলা হয়েছে। পুকুরের এ পাড় ভেঙে যাওয়াতে এ পথে আর চলাচল করা যাবে না। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পাগলা-বীরগাঁও সড়কটি বিপজ্জন হয়ে যাওয়ার পর জায়গাতেই চার-পাঁচটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনা কবলিত একজন পঞ্চাশোর্ধ মহিলা দীর্ঘদিন সিলেটের ওসমানীতে ভর্তি থাকার পর বর্তমানে বাড়িতে শয্যাশায়ী আছেন। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আরও বড় ধরণের দুর্ঘটনা বা প্রাণহানি ঘটার আগেই এই জায়গার স্থায়ী সংস্কার চান এলাকাবাসী। এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা, কসবা বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলমের প্রতি অভিযোগ এনে এলাকাবাসী বলেন, আমরা যখন দেখেছি পুকুরটি অপরিকল্পিতভাবে খনন হচ্ছে তখন প্রতিবাদ করতে চেয়েছি। কিন্তু জাহাঙ্গীর আলম ঠিকাদারের পক্ষে কথা বলেছে।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার এলাকার কাজ। তাছাড়া আমি একটি প্রতিষ্ঠানের পদে আছি। আমাদের এখানে কিছু মানুষ কাজ করতে এসেছেন। তাদেরকে তো কেউ না কেউ সহযোগিতা করতে হবে? আমি তাদের সহযোগিতা করেছি মাত্র। আমি প্রকল্পের কেউ নই। কাজ করেছে এলজিইডি আর ঠিকাদার। এখন আমাকে জড়িয়ে অবান্তর কথা বলা হচ্ছে।
এলাকাবাসীর পক্ষে প্রবীণ মুরব্বি মো. কালাধন মিয়া, প্রভাষক মো. শের জাহান, সমাজকর্মী নজরুল ইসলাম, হোসাইন আহমদ, তোফাজ্জল হোসেন ও রিপন মিয়া বলেন, কাজটি সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। আমরা তখনই কথা বলতে চেয়েছি কিন্তু জাহাঙ্গীর আলম আমাদের বিরোধীতা করেছেন। এখন রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে। পাড় ধ্বসে পড়েছে। দ্রুত এগুলো স্থায়ী সংস্কার করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
বুশরা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. হাবিবুর রহমান হাবিবের বক্তব্য নিতে তার ব্যক্তিগত ফোন নাম্বারে একাধিকবার কল করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। কিছুক্ষণ পর তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন বলেন, নিয়ম মেনেই আমার কাজ করেছি। পানি ও বৃষ্টির কারণে হয়তো রাস্তা-পাড় ভাঙতে পারে। ইতোমধ্যে ভেঙে যাওয়া এ অংশ মেরামতের জন্য লোক লাগানো হয়েছে। আগামীকাল (আজ) বাঁশ ও প্রয়োজনীয় উপকরণ ক্রয় করে দ্রুত এই রাস্তা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হবে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করবো।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আল নূর তারেক বলেন, খবর পেয়ে আমি নিজে জায়গাটি দেখে এসেছি। ইতোমধ্যে রাস্তা মেরামতের কিছু স্থায়ী শ্রমিক ওই জায়গায় সব সময় থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। বাঁশসহ আরও যা যা লাগে এটি প্রটেকশনের জন্য সব করা হবে। আমার কর্মকর্তাদের সে নির্দেশনা দেওয়া আছে। রাস্তার যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সে দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবো।