সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। সম্প্রতি ৪’শ বস্তা চিনি ছিনতাইয়ের ঘটনায় বিয়ানীবাজারে ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব জড়িত থাকা নিয়ে তুমুল সমালোচনা ও বির্তকের মুখে এই কমিটি বাতিল করা হয়েছে। ১৪ জুন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ইনান ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের জরুরী সিদ্ধান্ত মোতাবেক জানানো যাচ্ছে যে, সংগঠনের শৃংখলা ও মর্যাদা পরিপন্থি এবং অপরাধমুলক কর্মকান্ডে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিয়ানীবাজার উপজেলা ও পৌর শাখা বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১১ মার্চ বিয়ানীবাজার উপজেলা, সরকারি কলেজ ও পৌর ছাত্রলীগের কমিটি পত্রিকায় প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঘোষণা করে সিলেট জেলা ছাত্রলীগ। সেই হিসাবে মাত্র ৩ মাসের মধ্যেই বাতিল হলো বিয়ানীবাজার ছাত্রলীগের কমিটি। ঘোষিত কমিটি নিয়ে শুরু থেকেই ছিল নানা বির্তক। গত ৮ জুন ভোরে সরকারি নিলামে কেনা স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর (এক ট্রাক) ৪’শ বস্তা চিনি বিয়ানীবাজারের চারখাই থেকে অস্ত্রের মুখে চালককে জিম্মি করে ছিনাতাই করে পৌরসভা এলাকায় নিয়ে আসা হয়। পরে ঐ ব্যবসায়ীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাঠে নামে থানা পুলিশ। উদ্ধার হয় ৮০ বস্তা চিনি, ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত একটি পিকআপ, গ্রেফতার হত দুজন। মূল হোতদের আড়ালে রেখে সহযোগী ১১জনকে আসামী করে থানায় মামলা হয় ঘটনার ৩দিন পর ১১ জুন। এরপর বেরিয়ে আসে এই ঘটনার সাথে বিয়ানীবাজার উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল শীর্ষ নেতারা জড়িত থাকার আলামত। সিসি টিভি ফুটেজ থেকে বেরিয়ে আসা তথ্য প্রমাণ স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতেই শুরু হয় নানা বির্তক ও সমালোচনা। এই অবস্থায় চিনি ছিনতাই কান্ড যখন পূর্ব সিলেটে ‘টক অব দ্যা ট্রপিক’, ঠিক তখনই আগুনে ঘি ঢেলে দিয়ে স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় পড়ে উপজেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার মধ্যে চিনি চিনতাইয়ে জড়িত থাকা ও তা থেকে পরিত্থানের পরিকল্পনা নিয়ে ফোনালাপের অডিও। এতে বিভিন্ন মাধ্যমে সমলোচনার ঝড় উঠে। সেই ঝড়ের প্রথম আঘাতে বাতিল হয় উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের কমিটি। পরবর্তীতে কি ঘটে তা দেখার অপেক্ষায় বিয়ানীবাজারবাসী।
সূত্র জানিয়েছে, বিয়ানীবাজারের একটি চক্র দীর্ঘদিন থেকে চিনি ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত। এই চক্রের মূল টার্গেট সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে আসা ভারতীয় চিনির চোরাকারবারিরা। পিকআপ বা ছোট ট্রাকে করে গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার সময় চক্রটি চিনি বোঝাই চোরাচালানের গাড়ি আটক করে। পুলিশ/র্যাবের ভয় দেখিয়ে, আবার কখনো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করে। পুলিশের ভয়ে চোরাকারবারিরাও ঝামেলা না বাড়িয়ে তাদের সাথে সমঝোতা করে নেন। যারা টাকা দিতে পারে না বা দেয় না তাদের গাড়ি থেকে জোর পূর্বক ১০/১৫ বস্তা চিনি চক্রটির সাথে থাকা পিকআপে করে নিয়ে যায়। পরে নিজেদের ঠিক করে রাখা ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেয়। ভুক্তভোগী একাধিক ভারতীয় চোরাই চিনিরি কারবারি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিষয়টি জানিয়েছেন।