মানুষকে সাহায্য করা ইসলামের দৃষ্টিভঙি

রেজাউল করীম রেজাউল করীম

ইসলামি সংগীত শিল্পী

প্রকাশিত: ৮:২০ অপরাহ্ণ, মে ২৪, ২০২১ 1,452 views
শেয়ার করুন

গরিব ও দুস্থ মানুষের সহযোগিতা, তাদের মুখে হাসি ফুটানো, সমাজের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ এবং পবিত্র ইসলামের প্রচার ও প্রসারে সদকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সত্যিই অনস্বীকার্য। তাই তো আল্লাহ তা‘আলা ইসলাম প্রচারে নিজের ধন-সম্পদ ব্যয় করাকে তাঁর পথে জিহাদ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ إِنَّمَا ٱلۡمُؤۡمِنُونَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ ثُمَّ لَمۡ يَرۡتَابُواْ وَجَٰهَدُواْ بِأَمۡوَٰلِهِمۡ وَأَنفُسِهِمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِۚ أُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلصَّٰدِقُونَ ١٥ ﴾ [الحجرات: ١٥]

“সত্যিকার মু’মিন ওরা যারা আল্লাহ তা‘আলা ও তদীয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর ঈমান আনার পর আর কোনো সন্দেহ পোষণ করেনি এবং নিজ সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহ তা‘আলার পথে জিহাদ করেছে, তারাই সত্যনিষ্ঠ”। [সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১৫]

বরং আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে যখনই জিহাদের কথা উল্লেখ করেছেন তখনই মালের জিহাদকে জানের জিহাদের আগেই উল্লেখ করেছেন। উপরোক্ত আয়াত এরই প্রমাণ বহন করে। তবে কুরআনের একটিমাত্র জায়গায় আল্লাহ তা‘আলা জানের জিহাদকে মালের জিহাদের আগেই উল্লেখ করেন। যা নিম্নরূপ,

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ إِنَّ ٱللَّهَ ٱشۡتَرَىٰ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ أَنفُسَهُمۡ وَأَمۡوَٰلَهُم بِأَنَّ لَهُمُ ٱلۡجَنَّةَۚ يُقَٰتِلُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَيَقۡتُلُونَ وَيُقۡتَلُونَۖ ﴾ [التوبة: ١١١]

“নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদের থেকে তাদের জীবন ও সম্পদ কিনে নিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়ে। তারা আল্লাহ তা‘আলার পথে যুদ্ধ করবে। তারা অন্যকে হত্যা করবে এবং পরিশেষে তারা নিজেরাও নিহত হয়ে যাবে। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১১১]

উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«ذُكِرَ لِيْ: أَنَّ الْأَعْمَالَ تَبَاهَى، فَتَقُوْلُ الصَّدَقَةُ: أَنَا أَفْضَلُكُمْ»

“আমাকে বলা হয়েছে যে, আমলগুলো পরস্পর গর্ব করবে। তখন সদকা বলবে, আমি তোমাদের সবার চাইতে শ্রেষ্ঠ”।
তাই নিম্নে সদকার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফযীলত বর্ণনা করা হলো। আশা করি মুসলিম জনসাধারণ এতে নিশ্চয় উদ্বুদ্ধ হবেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ قُل لِّعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ يُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُنفِقُواْ مِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ سِرّٗا وَعَلَانِيَةٗ مِّن قَبۡلِ أَن يَأۡتِيَ يَوۡمٞ لَّا بَيۡعٞ فِيهِ وَلَا خِلَٰلٌ ٣١ ﴾ [ابراهيم: ٣١]

“(হে রাসূল!) তুমি আমার মু’মিন বান্দাহদেরকে বলে দাও, যেন তারা সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে (একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাঁরই পথে) ব্যয় করে, সে দিন আসার পূর্বে যে দিন ক্রয়-বিক্রয় এবং বন্ধুত্ব বলতে কিছুই থাকবে না”। [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৩১] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿ ءَامِنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَأَنفِقُواْ مِمَّا جَعَلَكُم مُّسۡتَخۡلَفِينَ فِيهِۖ فَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡ وأَنفَقُواْ لَهُمۡ أَجۡرٞ كَبِيرٞ ٧ ﴾ [الحديد: ٧]

“তোমরা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ঈমান আনো এবং আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে যা কিছুর উত্তরাধিকারী বানিয়েছেন তা থেকে কিছু (তাঁর রাস্তায়) ব্যয় করো। অতএব তোমাদের মধ্য থেকে যারা (আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর) ঈমান এনেছে এবং (তাঁর রাস্তায় নিজেদের ধন-সম্পদ) ব্যয় করেছে তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার”। [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ৭]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثٍ: صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، وَعِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، وَوَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُوْ لَهُ»

“কোনো মানুষ মারা গেলে তার সকল আমল বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি আমল তার মৃত্যুর পরও চালু থাকে, দীর্ঘস্থায়ী সদকা, এমন জ্ঞান যা দিয়ে মানুষ তার মৃত্যুর পরও লাভবান হয়, এমন নেককার সন্তান যে তার মৃত্যুর পর তার জন্য দো‘আ করে”।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ مَّن ذَا ٱلَّذِي يُقۡرِضُ ٱللَّهَ قَرۡضًا حَسَنٗا فَيُضَٰعِفَهُۥ لَهُۥٓ أَضۡعَافٗا كَثِيرَةٗۚ وَٱللَّهُ يَقۡبِضُ وَيَبۡصُۜطُ وَإِلَيۡهِ تُرۡجَعُونَ ٢٤٥ ﴾ [البقرة: ٢٤٥]

“তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে আল্লাহ তা‘আলাকে উত্তম ঋণ দিবে তথা আল্লাহ তা‘আলার পথে সদকা করবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে তা বহু বহু গুণে বাড়িয়ে দিবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলাই কাউকে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ও অস্বচ্ছল করেন এবং তাঁর দিকেই তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তিত হতে হবে”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৪৫]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿ مَّثَلُ ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمۡوَٰلَهُمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنۢبَتَتۡ سَبۡعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنۢبُلَةٖ مِّاْئَةُ حَبَّةٖۗ وَٱللَّهُ يُضَٰعِفُ لِمَن يَشَآءُۚ وَٱللَّهُ وَٰسِعٌ عَلِيمٌ ٢٦١ ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمۡوَٰلَهُمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ ثُمَّ لَا يُتۡبِعُونَ مَآ أَنفَقُواْ مَنّٗا وَلَآ أَذٗى لَّهُمۡ أَجۡرُهُمۡ عِندَ رَبِّهِمۡ وَلَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ٢٦٢ ﴾ [البقرة: ٢٦١، ٢٦٢]

“যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে নিজেদের ধন-সম্পদগুলো ব্যয় করে তাদের উপমা যেমন একটি শস্য বীজ। যা থেকে উৎপন্ন হয়েছে সাতটি শীষ। প্রত্যেক শীষে রয়েছে শত শস্য। আর আল্লাহ তা‘আলা যার জন্য ইচ্ছে করবেন তাকে আরো বাড়িয়ে দিবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা হচ্ছেন মহান দাতা ও মহাজ্ঞানী। যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে নিজেদের ধন-সম্পদগুলো ব্যয় করে এবং সে জন্য কাউকে খোঁটাও দেয় না, না দেয় কষ্ট। তাদের জন্য রয়েছে তাদের প্রভুর পক্ষ থেকে বিশেষ পুরস্কার। বস্তুতঃ তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা কখনো চিন্তাগ্রস্তও হবে না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৬১-২৬২]

তিনি আরো বলেন,

﴿ إِن تُقۡرِضُواْ ٱللَّهَ قَرۡضًا حَسَنٗا يُضَٰعِفۡهُ لَكُمۡ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡۚ وَٱللَّهُ شَكُورٌ حَلِيمٌ ١٧ ﴾ [التغابن: ١٧]

“তোমরা যদি আল্লাহ তা‘আলাকে উত্তম ঋণ দান করো তথা তাঁর পথে সদকা-খয়রাত করো তা হলে তিনি তোমাদেরকে তা বহু গুণে বাড়িয়ে দিবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা মহা গুণগ্রাহী ও অত্যন্ত সহনশীল”। [সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ১৭]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

﴿ إِنَّ ٱلۡمُصَّدِّقِينَ وَٱلۡمُصَّدِّقَٰتِ وَأَقۡرَضُواْ ٱللَّهَ قَرۡضًا حَسَنٗا يُضَٰعَفُ لَهُمۡ وَلَهُمۡ أَجۡرٞ كَرِيمٞ ١٨ ﴾ [الحديد: ١٨]

“নিশ্চয় দানশীল পুরুষ ও দানশীলা নারী এবং যারা আল্লাহ তা‘আলাকে উত্তম ঋণ দান করে তাদেরকে দেওয়া হবে বহুগুণ বেশী সাওয়াব এবং তাদের জন্য রয়েছে অত্যন্ত সম্মানজনক মহা পুরস্কার”। [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ১৮]

তিনি আরো বলেন,

﴿ يَمۡحَقُ ٱللَّهُ ٱلرِّبَوٰاْ وَيُرۡبِي ٱلصَّدَقَٰتِۗ وَٱللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ ٢٧٦ ﴾ [البقرة: ٢٧٦]

“আল্লাহ তা‘আলা সুদের বরকত উঠিয়ে নেন এবং সদকা বর্ধিত করেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তা‘আলা অতি কৃতঘ্ন তথা কাফির পাপাচারীদেরকে ভালোবাসেন না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৬]

কোনো সদকায় সাতটি গুণ পাওয়া গেলে তা বহুগুণে বেড়ে যায়। যা নিম্নরূপঃ

ক. সদকা হালাল হওয়া।

খ. নিজের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও সদকা করা।

গ. দ্রুত সদকা করা।

ঘ. পছন্দনীয় বস্তু সদকা করা।

ঙ. লুকিয়ে সদকা করা।

চ. সদকা দিয়ে তুলনা না দেওয়া।

ছ. সদকাগ্রহীতাকে কোনোভাবে কষ্ট না দেওয়া।

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«مَنْ تَصَدَّقَ بِعَدْلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ، وَلاَ يَقْبَلُ اللَّهُ إِلَّا الطَّيِّبَ، وَإِنَّ اللَّهَ يَتَقَبَّلُهَا بِيَمِينِهِ، ثُمَّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهِ، كَمَا يُرَبِّي أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ، حَتَّى تَكُونَ مِثْلَ الجَبَلِ»

“যে ব্যক্তি হালাল কামাই থেকে একটি খেজুর সমপরিমাণ সদকা করবে (আর আল্লাহ তা‘আলা তো একমাত্র হালাল বস্তুই গ্রহণ করে থাকেন) আল্লাহ তা‘আলা তা ডান হাতে গ্রহণ করবেন। অতঃপর তা তার কল্যাণেই বর্ধিত করবেন যেমনিভাবে তোমাদের কেউ একটি ঘোড়ার বাচ্চাকে সুন্দরভাবে লালন-পালন করে বর্ধিত করে। এমনকি আল্লাহ তা‘আলা পরিশেষে সে খেজুর সমপরিমাণ বস্তুটিকে একটি পাহাড় সমপরিমাণ বানিয়ে দেন”।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمۡوَٰلَهُم بِٱلَّيۡلِ وَٱلنَّهَارِ سِرّٗا وَعَلَانِيَةٗ فَلَهُمۡ أَجۡرُهُمۡ عِندَ رَبِّهِمۡ وَلَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ٢٧٤ ﴾ [البقرة: ٢٧٤]

“যারা নিজেদের ধন-সম্পদগুলো আল্লাহ তা‘আলার পথেই রাত-দিন প্রকাশ্যে এবং অপ্রকাশ্যে দান করবে তাদের প্রতিদান সমূহ তাদের প্রভুর নিকটই রক্ষিত থাকবে। কিয়ামতের দিন তাদের কোনো ভয়-ভীতি থাকবে না এবং তারা কখনো চিন্তাগ্রস্তও হবে না”। [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৭৪)
لَّا خَيۡرَ فِي كَثِيرٖ مِّن نَّجۡوَىٰهُمۡ إِلَّا مَنۡ أَمَرَ بِصَدَقَةٍ أَوۡ مَعۡرُوفٍ أَوۡ إِصۡلَٰحِۢ بَيۡنَ ٱلنَّاسِۚ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ ٱبۡتِغَآءَ مَرۡضَاتِ ٱللَّهِ فَسَوۡفَ نُؤۡتِيهِ أَجۡرًا عَظِيمٗا ١١٤ ﴾ [النساء: ١١٤]

“তাদের অধিকাংশ গোপন পরামর্শে কোনো কল্যাণ নেই। তবে যে ব্যক্তি সদকা-খয়রাত, সৎ কাজ ও মানুষের মাঝে শান্তি স্থাপনের নির্দেশ দেয় তাতে অবশ্যই কল্যাণ রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি পাওয়ার আশায় যে ব্যক্তি এমন করবে তাকে আমি অচিরেই মহা পুরস্কার দেবো”। [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৪]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ فَأَمَّا مَنۡ أَعۡطَىٰ وَٱتَّقَىٰ ٥
وَصَدَّقَ بِٱلۡحُسۡنَىٰ ٦
فَسَنُيَسِّرُهُۥ لِلۡيُسۡرَىٰ ٧
وَأَمَّا مَنۢ بَخِلَ وَٱسۡتَغۡنَىٰ ٨
وَكَذَّبَ بِٱلۡحُسۡنَىٰ
٩ فَسَنُيَسِّرُهُۥ لِلۡعُسۡرَىٰ ١٠ ﴾
[الليل: ٥، ١٠]

“সুতরাং যে ব্যক্তি (একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য তাঁরই পথে) দান করলো, আল্লাহভীরু হলো এবং পুণ্যের প্রতিদান তথা জান্নাতকে সত্য বলে জ্ঞান করলো অচিরেই আমি তার জন্য পুণ্য তথা জান্নাতের পথকে সহজ করে দেবো। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কার্পণ্য করলো ও নিজকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলো এবং পুণ্যের প্রতিদান তথা জান্নাতকে মিথ্যা বলে জ্ঞান করলো অচিরেই আমি তার জন্য কঠিন পরিণাম তথা জাহান্নামের পথকে সহজ করে দেবো”। [সূরা আল-লাইল, আয়াত: ৫-১০]
হাসান রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«دَاوُوْا مَرْضَاكُمْ بِالصَّدَقَةِ»

“তোমরা রুগ্নদের চিকিৎসা করো সদকা দিয়ে”।

আবু যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাক্ষাতে গেলাম। তখন তিনি কা’বা শরীফের ছায়ায় বসা ছিলেন। এমতাবস্থায় তিনি আমাকে দেখে বললেন,

«هُمُ الْأَخْسَرُوْنَ وَرَبِّ الْكَعْبَةِ ! هُمُ الْأَخْسَرُوْنَ وَرَبِّ الْكَعْبَةِ ! قُلْتُ: مَا شَأْنِيْ، أَيُرَى فِيَّ شَيْءٌ، مَا شَأْنِيْ ؟ فَجَلَسْتُ إِلَيْهِ وَهُوَ يَقُوْلُ: فَمَا اسْتَطَعْتُ أَنْ أَسْكُتَ، وَتَغَشَّانِيْ مَا شَاءَ اللهُ، فَقُلْتُ: مَنْ هُمْ بِأَبِيْ أَنْتَ وَأُمِّيْ يَا رَسُوْلَ اللهِ! قَالَ: الْأَكْثَرُوْنَ أَمْوَالاً إِلاَّ مَنْ قَالَ هَكَذَا، وَهَكَذَا، وَهَكَذَا، وَفِيْ رِوَايَةٍ: مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ وَعَنْ يَمِيْنِهِ وَعَنْ شِمَالِهِ، وَقَلِيْلٌ مَا هُمْ»

“আল্লাহর কসম! ওরাই ক্ষতিগ্রস্ত। আল্লাহর কসম! ওরাই ক্ষতিগ্রস্ত। আবু যর বলেন, আমি মনে মনে বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার মধ্যে ব্যতিক্রম কিছু দেখে ফেললেন কি? হায়! আমার কি হলো। অতঃপর আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পার্শ্বেই বসলাম; অথচ তিনি সে কথাই বার বার বলছেন। তখন আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না। আমাকে যেন কোনো কিছু ছেয়ে গেছে। আমি বললাম, কারা ওরা? হে আল্লাহর রাসূল! আপনার জন্য আমার মাতা-পিতা উৎসর্গ হোক! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা হলো ধনী-সম্পদশালী। তবে ওরা ক্ষতিগ্রস্ত নয় যারা এদিক ওদিক তথা সর্বদিকে সদকা-খয়রাত করলো। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, সামনে করলো, পেছনে করলো। ডানে করলো, বামে করলো। তথা সর্বদিকে সদকা-খয়রাত করলো এবং তাঁরা খুবই কম”।
সাল্মান ইবন ‘আমির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«الصَّدَقَةُ عَلَى الْـمِسْكِيْنِ صَدَقَةٌ، وَعَلَى ذِيْ الرَّحِمِ اثْنَتَانِ: صَدَقَةٌ وَصِلَةٌ»

“গরিব-দুঃখীকে সদকা-খয়রাত করলে শুধু একটি সাওয়াব পাওয়া যায় যা হচ্ছে সদকার সাওয়াব। আর আত্মীয়-স্বজনকে সদকা-খয়রাত করলে দু’টি সাওয়াব পাওয়া যায়ঃ একটি সদকার সাওয়াব আর অন্যটি আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার সাওয়াব”।
বেশি বেশি দান–খয়রাত করুন। কখনো প্রকাশ্যে, কখনো গোপনে, যখন যেমনটি প্রযোজ্য। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘যদি তোমরা দান প্রকাশ্যে করো তবে তা উত্তম; আর যদি তা গোপন করো এবং অভাবীদের দাও, তবে তা তোমাদের জন্য শ্রেয়। এর মাধ্যমে আল্লাহ তোমাদের মন্দগুলো মোচন করে দেবেন। তোমরা যা করো, আল্লাহ তা অবগত আছেন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৭১)। দান করে খোঁটা দিতে নেই। এতে দানের ফজিলত বিনষ্ট হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সদ্ব্যবহার, সুন্দর কথা ওই দান অপেক্ষা উত্তম, যার পেছনে আসে যন্ত্রণা। আল্লাহ তাআলা ঐশ্বর্যশালী ও পরম সহিষ্ণু। হে মুমিনগণ! তোমরা খোঁটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে তোমাদের দানকে বাতিল কোরো না। তাদের মতো, যারা তাদের সম্পদ ব্যয় করে লোকদেখানোর জন্য এবং তারা আল্লাহ ও পরকাল বিশ্বাস করে না।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ২৬৩-২৬৪)। নবীজি (সা.) বলেন, ‘খোঁটাদানকারী বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (তিরমিজি)।