ঈদের আনন্দ-উৎসবে যৌথ পরিবারের অগাধ ভালবাসা ও সহমর্মিতা

লুৎফুর রহমান লুৎফুর রহমান

সম্পাদক ও সিইও, বায়ান্ন টিভি

প্রকাশিত: ১০:২৯ অপরাহ্ণ, মে ৪, ২০২১ 489 views
শেয়ার করুন

পরিবার হল এমন একটা ব্যাপার, যেখানে সকলের সাত খুন মাফ! বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে যারা একসঙ্গে জটাপটি করে থাকে আর একে অপরের চোখের জল মোছায়, বাজে জোক শুনেও হাসে, আর অন্যের আনন্দে দেদার পার্টি করে কেন করছে সেটা না বুঝেই, তাকেই বলে পরিবার! এবার আপনি পরিবার বলতে কী বোঝেন, সেটা আপনার উপর। পরিবার আপনি জন্মসূত্রে পেতে পারেন, কর্মসূত্রে পেতে পারেন আবার বন্ধুসূত্রেও পেতে পারেন! শুধু আপনার সঙ্গে রক্তের সম্পর্ক থাকলেই আপনি তাকে নিজের পরিবারের অন্তর্গত মনে করবেন, এমনটা নয়। আত্মিক সম্পর্কটাই আসল।

সমাজ জীবনের প্রথম ভিত্তিই হলো পরিবার। পরিবার বলতে স্বামী-স্ত্রী, সন্তান-সন্তুতি, পিতা-মাতা, ভাই-বোনদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একান্নভুক্ত পরিমণ্ডলকে বুঝায়। এদের সমন্বয়ে সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে পারিবারিক জীবনের গুরুত্ব অত্যাধিক। পরিবার ছাড়া কি মানুষ বাঁচতে পারে? অনেকেই হয়ত পারে। তবে পরিবারহীন ব্যক্তির জীবন ততটা সুখকর হয়ে ওঠে না। সমাজের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ পরিবার। ব্যক্তির বিকাশ, মানসিকতা, ভালোবাসা, ক্রোধসহ অনেক কিছুতেই পরিবার প্রভাবকের ভূমিকা পালন করে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা যায়, পরিবারের সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক ব্যক্তির স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে।

যৌথ পরিবারে সবার মধ্যেই পজিটিভ গুণগুলো বেশি দেখা যায় । যেমন পরিবারের একজনের সাথে অন্যজনের কথা কাটাকাটি হল । ফলসরূপ কথা বন্ধ , কান্নাকাটি করে বুক ভাসানো বা চিৎকার করে প্রলাপ বকা বা গালাগালি ইত্যাদি ইত্যাদি । তখন সাথে সাথেই পরিবারে দুটি দল তৈরি হয়ে যায় । এক দল একজনের পক্ষে অন্যদল অন্যজনের পক্ষে । আবার দুই দলেরও লিডার থাকে যারা বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় তুলে ধরে এবং তাদের দলের ক্ষুদে সদস্যরা বিষয়গুলো ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে । এভাবে ছোটছোট বিষয় নিয়ে সারাদিনই চলে তোলপাড় হয় প্রচুর মজা । যেই সন্ধ্যা হল অমনি সবাই যে যার যার কাজে বা ঘরে যায় । যার পড়া আছে সে পড়তে বসে, যার রান্না আছে সে রান্না করে, কেউবা দেখে টিভি । সারাদিন কি হল তা নিয়ে আর কোন কথা না । পরিবার প্রধান বা কর্তা যখন বাসায় আসে তখন তাকে জানানো হয় সারাদিনের সব ঘটনা । তিনি সবাইকে ডাকবেন বুঝাবেন এবং একটি রায় দিবেন । কেউ কোন উচ্চ-বাচ্চ না করে মেনে নিবে । এটাই যৌথ পরিবারের অলিখিত নিয়ম ।

হারিয়ে যেতে বসেছে যৌথ পরিবারের সুবিধা ও বন্ধন। যাই বলুন না,কেন একটা যৌথ পরিবারে কিন্তু সব কিছুই একটু বেশী বেশী। এখানে বিভিন্ন সাংসারিক কাজ, নানান ঝামেলা, অথবা আজাইরা ক্যাচাল যেমন বেশী তেমনি আবার একে অপরকে সাপোর্ট করার প্রবনতা কিংবা একে অপরের প্রতি আদর ভালোবাসা সহমর্মিতা, সহানুভূতি সবই কিন্তু এখানে অনেক বেশী বেশী। আজকে চলুন দেখি যৌথ পরিবারের কিছু অসুবিধা এবং সুবিধা নিয়ে আলোকপাত করা যাক।একবিংশ শতাব্দীতে একক বা ছোট পরিবার নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি–ছোট পরিবার মানেই সুখী পরিবার। স্বামী, স্ত্রী এবং একটি কিংবা ২টি সন্তান। কয়েক দশক আগেও বাবা-মা, ভাই-বোন, চাচা-চাচী, দাদা-দাদী নিয়ে ছিল যৌথ পরিবার। যৌথ পরিবারে একসঙ্গে থাকা-খাওয়া, হই-হুল্লোড়, আনন্দ-উৎসব এর মজাই আলাদা। যৌথ পরিবার ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। শহুরে জীবনের ঢেউ গ্রামেও লেগেছে। গ্রাম থেকেও যৌথ পরিবার উঠে যেতে বসেছে। এক সময় গ্রাম কিংবা শহরে অনেক যৌথ পরিবার দেখা যেত। মানুষের পুকুর ভরা মাছ ছিল, ক্ষেত জুড়ে ধান ছিল, গোয়াল ভরা গাভী ছিল, যৌথ পরিবারে অনেক সুখ সাচ্ছন্দ্য ছিল। অবস্থাভেদে প্রতিটি পরিবারে সদস্য ছিল ২০ হতে ৩০ জন। কোথাও আবার তার চেয়ে বেশী। পরিবারের কর্তার আদেশ সবাই মান্য করে চলতো। ভাই-বোনের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকতো। বিবাহ বিচ্ছেদ হতো কম। পৃথিবী যতো এগিয়ে যাচ্ছে যৌথ পরিবার তত কমে যাচ্ছে। হারিয়ে যেতে বসেছে যৌথ বা একান্নবর্তী পরিবারের সুবিধা ও ঐতিহ্য। যুগের হাওয়ায় যৌথ পরিবার ভেঙে যেতে যেতে পরিবারের সদস্য সংখ্যা এখন ৩ জন কিংবা ৪ জনে এসে ঠেকেছে। তদুপরি সবাই ব্যস্ত।

বিপদের সময় একমাত্র পরিবারই কাজে আসে,প্রকৃতি আমাদের কিছু দুর্দান্ত ব্যাপার উপহার দিয়েছে, এখনও যখন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের একান্ত আলাপচারিতা দেখি, অধিকাংশ ব্যক্তিই তাদের একান্নবর্তী পরিবারের স্মৃতিচারণ করেন। পরিপূর্ণ আনন্দ যে ঘরভর্তি মানুষের মধ্যে নিহিত, অবলীলায় সবাই স্মরণ এবং স্বীকার করেন। এখন তো যান্ত্রিক শহর জীবনে ছেলেমেয়েরা নিজের পছন্দ করে বিয়ে করলেই মা-বাবা বেশ খুশি হন। দিন দিন সামাজিক রীতিনীতি বদলাচ্ছে, মানুষের মূল্যবোধ পরিবর্তন হচ্ছে। বদলাচ্ছে মানুষের অনুশাসন কাঠামো। মানুষের আর্থিক স্বাধীনতা যত বাড়ছে, জীবন যাপনের স্বাধীনতাও ততটাই ভোগ করতে চাইছে। পরিবারগুলো ভাঙছে। সমাজও তার আদল বদলাচ্ছে। জীবন যাপনের পুরনো রীতিগুলোও পাল্টাচ্ছে। একক পরিবারে প্রত্যেকের গোপনীয়তা রক্ষা হয়। নিজের ইচ্ছে মতো চলা যায়। আয়-ব্যয় সঞ্চয় ভবিষ্যৎ নিজের মতো রক্ষিত হয়। কিন্তু যৌথ পরিবার হলো একটি বটবৃক্ষের মতো অর্থ্যাৎ যৌথ পরিবারের সুবিধা একক পরিবারের চেয়ে অনেক গুণ বেশি। যৌথ পরিবার হলে বিপদে-আপদে অনেককে পাশে পাওয়া যায়। সুখ দুঃখ ভাগ করে নেওয় যায়। একান্নবর্তী বা যৌথ পরিবারের সদস্যদের সবার একে অপরের প্রতি অগাধ ভালোবাসা, আদর স্নেহ ইত্যাদি সবসময়ই অটুট থাকে। যে কোন বিপদে আপদে কিংবা উৎসব, পালা পার্বণে একান্নবর্তী পরিবারের সদস্যদেরই সবচেয়ে বেশি সুবিধা এবং আনন্দ হয়।

যৌথ পরিবারের শিশুরা বড় হয় বড়দের দেয়া আদর, স্নেহ, মমতা, ভালবাসা ইত্যাদি নিয়ে। পরিবারের দাদা-দাদি, চাচা-চাচীদের উপস্থিতিতে যেসব শিশু বড় হয় তাদের স্বার্থপর হওয়ার সুযোগ কম থাকে। তাদের মানসিক বিকাশ ও বন্ধন হয় সুদৃঢ়। আবার যৌথ পরিবারের সদস্যরা কখনো নিজেকে একা অনুভব করেনা অথবা কোন হীনমন্যতায় ভোগে না। যৌথ পরিবারের যে কোন কাজ, জিনিসপত্র ইত্যাদি সকলকিছুই সদস্যদের মাঝে ভাগাভাগি হওয়ার সিস্টেম দেখে এ পরিবারের শিশুরাও ছোট থেকেই উদার মনমানসিকতা নিয়ে বড় হতে শেখে, দায়িত্বশীল হতে শেখে। তাছাড়া, পারিবারিক সাপোর্ট বেশী থাকায় যৌথ পরিবারের চাকুরিজীবী মায়েদের জন্য অনেক সুবিধা পাওয়া