সিলেটে পানির অভাবে ৫শ একর বােরাে ধানের ক্ষতি, ৩ হাজার একর অনাবাদি

মাহবুব জয়নুল মাহবুব জয়নুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৭, ২০২১ 363 views
শেয়ার করুন

 

সিলেটের ওসমানীনগরে নদী ও খালের পানি সেচ দিয়ে মৎস্য আহরণ করায় বাম্পার ফলনের পরও পানির অভাবে ৫শ একর বােরাে ধানের জমির তলা ফেটে ধান নষ্ট হয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে কৃষকদের। শুধু তাই নয় ধরে সংশ্লিষ্ট এলাকার জলাশয়গুলাে সেচ দিয়ে মাছ ধরার কারণে গত দুই বছর এলাকার ১৪টি গ্রামের বন ও হাওরের প্রায় ৩ হাজার একর বােরাে জমি অনাবাদি হয়ে পড়ে রয়েছে।

 

 

আর এতে করে বর্গাচাষি সহ ছােট বড় কয়েক হাজার কৃষকের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনসহ কৃষি ও মৎস্য বিভাগ উদাসী

বলে কৃষকদের অভিযােগ। ক্ষতিগ্রস্ত বােরাে চাষিরা স্থানীয় নারকিলা নদী ও ফুফরা খালের ইজারা স্থায়ীভাবে বন্ধ করা, কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেয়া সহ উপজেলা কৃষি ও মৎস্য কর্মকর্তার শাস্তি দাবি করেছেন উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা:গেছে, গেল শীত মৌসুমে উপজেলা পরিষদ থেকে উপজেলার প্রাচীন নাড়কিলা নদী ও ফুপরা খাল ইজারা দেওয়া হয় স্থানীয় কিছু মৎস্যজীবীকে। মৎস্য আইন অনুযায়ী খাল, নদী কিংবা জলাশয় সেচ না দিয়ে মাছ আহরণ করার বিধান থাকলেও ইজারাদাররা গত পৌষ মাসেই নারকিলা নদী ও ফুপরা খাল সেচ দিয়ে মাছ আহরণ করে।

 

 

নারকিলা নদী ও ফুপরা খালের পানির উপর নির্ভর করে উপজেলার গােয়ালাবাজার ইউনিয়নের পূর্ব ব্রাহ্মণগ্রাম, পশ্চিম ব্রাহ্মণগ্রাম, গদিয়ারচর, একারাই, শশারকান্দি, এওলাতৈইল, জায়ফরপুর, জহিরপুর, মােবারকপুর, বুরুঙ্গা ইউনিয়নের নােয়াগা ও প্রথমাপা গ্রামের বনের প্রায় সাড়ে তিন হাজার একর জমিতে বােরা ধান আবাদ করেন স্থানীয় কৃষকরা। গত দুই বছর ধরে নারকিলা নদী ও ফুপরা খাল ইজারা দেয়ার ফলে ইজারাদাররা নদী ও খালের পানি সেচ দিয়ে মাছ আহরণ করার ফলে নদী সংলগ্ন বন ও হাওর এলাকার জমিগুলােতে পানির অভাবে বােরাে ধান আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে।

 

চলতি বােরাে মৌসুমে এ সব এলাকার সাড়ে তিন হাজার একরের মধ্যে মাত্র ৫শ একর জমিতে বােরাে ধান আবাদ করা হলেও নদী ও খালে পানি না থাকার কারণে পানির অভাবে বােরাে জমির ক্ষেতের তলা ফেটে চৌচির হয়ে ধান মরে জ্বলে যাচ্ছে। সরেজমিন শুক্রবার বিকেলে পশ্চিম ব্রাহ্মণগ্রাম, শশারকান্দি এওলাতৈইল, মােবারকপুর, নােয়াগাও সহ বেশ কিছু এলাকা পরিদর্শকালে দেখা যায় পানিশণ্য।

নারকিলা নদী ও ফুপরা খাল, আবাদকৃত বােরাে ধানের ক্ষেতে ফেটে চৌচির, বিভিন্ন জমির ধান পানির অভাবে মরে গেছে। এ সময় দেখা হয় মােবারকপুরের কৃষক সমসু মিয়ার (৬৫) সাথে। তিনি জানান, ২২৪ শতক জমিতে এবার বােরা ধান আবাদ করেছেন কিন্তু পানির অভাবে ধান নষ্ট হয়ে তার প্রায় ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। একই এলাকার কৃষক রুমেল মিয়া (৪০) বলেন, আমি ৫০ কেদার (১৫ একর) জমিতে বােরাে ধান আবাদ করেছিলাম কিন্তু নদী ও খালে পানি না থাকার কারণে আমার প্রায় সকল ধান নষ্ট হয়ে ২/৩ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

 

একই অবস্থা শশারকান্দি গ্রামের ইউসুফ খানের। ক্ষতিগ্রস্ত এই কৃষকরা তাদের ক্ষতিপূরণসহ কৃষি ও মৎস্য অফিসারের শাস্তির দাবি করেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ শাহনূরুর রহমান শানুর বলেন, পশ্চিম ব্রাহ্মণগ্রাম, এওলাতৈইলসহ নারকিলা ও ফুপরা খাল এলাকায় আমার ২ শ কেদার (৬০ একর) জমি রয়েছে। এ বছর মাত্র ৫০ কেদার (১৫ একর) জমিতে আমি বােরাে আবাদ করেছিলাম কিন্তু পানির অভাবে সব নষ্ট হয়ে আমার কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। দেড়শ কেদার জমি 7. তাে অনাবাদিই রয়ে গেছে। আমাদের এলাকার কৃষকরা বােরাে ফসলের = ক্ষতিপুরণ, নারকিলা নদি ফুপরা খালের ইজারা বাতিল সহ মৎস্য এবং কৃষি ন অফিসারের শাস্তি দাবি করছেন।

 

 

উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ শাহনূরুর রহমান শানুর বলেন, পশ্চিম ব্রাহ্মণগ্রাম, এওলাতৈইলসহ নারকিলা ও ফুপরা খাল এলাকায় আমার ২ কেদার (৬০ একর) জমি রয়েছে। এ বছর মাত্র ৫০ কেদার (১৫ একর) জমিতে আমি বােরাে আবাদ করেছিলাম কিন্তু পানির অভাবে সব নষ্ট হয়ে আমার কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। দেড়শ কেদার জমি তাে অনাবাদিই রয়ে গেছে। আমাদের এলাকার কৃষকরা বােরাে ফসলের ক্ষতিপুরণ, নারকিলা নদি ফুপরা খালের ইজারা বাতিল সহ মৎস্য এবং কৃষি অফিসারের শাস্তি দাবি করছেন।

 

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাে. সুমন মিয়ার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি জানি না তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তার বলেন, এ ব্যাপারে আমি প্রযােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।