সাংবাদিক কাজী জমিরুল ইসলাম একজন মানবিক মানুষ

প্রকাশিত: ৩:৩০ অপরাহ্ণ, জুলাই ৫, ২০২০ 759 views
শেয়ার করুন
পুরো নাম কাজী মোহাম্মদ জমিরুল ইসলাম মমতাজ। সবাই তাকে কাজী নামেই চিনে। তিনি দক্ষিণ সুনামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি। একজন মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ। গুরুত্বপূর্ণ অনেক পরিচয়ে পরিচিত তিনি। তবুও তাঁকে একজন সাংবাদিকের পরিচয়ে দেখতে খুব বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি আমি।
 
সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের বিবাহ ও তালাক রেজিস্ট্রার এন্ড কাজী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রায় দেড় যুগ সময় ধরে। সেই ২০০৫ সাল থেকে অদ্যবধি জয়কলস ইউনিয়নের কাজী সাহেব তিনি। অমায়িক ব্যবহার আর মানুষের সাথে খুব সহজে মিশে যাওয়ার সহজিয়া বৈশিষ্টের আকৃষ্টতায় তিনি এখন সকলের প্রিয়জন। কি গ্রাম, কি শহর, কি শান্তিগঞ্জ, কি পাগলা; সব জায়গাতেই তাঁর একটি নিজস্ব আন্তরিক অবস্থান গড়ে তুলেছেন তিনি। বহুকাল অপেক্ষায়, কঠিনসব ধৈর্য্যর পরীক্ষা, কাজের নৈপূণ্যতায় আর যোগ্যতার সুষ্ঠু ব্যবহারের ফলে তিনি আজ সকলের কাছে প্রিয় সাংবাদিক, কাজী সাহেব। তিনি যে শুধু এ-ই, তা কিন্তু নয়? চারিত্রিক মাধুর্যতায় ভাস্বর কাজী মমতাজ একজন মানবিক মনের মানুষও। ইতোমধ্যে উপজেলাবাসী তাঁর মানবিক হৃদয়ের পরিচয় পেয়েছেন। দেখেছেন মনের বিশালতাও। তিনি নানান সময় নানা ব্যক্তির বিপদে-আপদে দ্বিধাবোধ ছাড়াই এগিয়ে আসেন প্রতিনিয়ত। একজন সাংবাদিক হয়েও অনেক সময় পালন করতে হয় শালিস ব্যক্তিত্বের ভূমিকা। নিজের ইউনিয়ন তো বটেই, এসব জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে তাঁকে ঘুরে বেড়াতে হয় উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নেও। দূর্গম অঞ্চলই হোক বা সহজাঞ্চল, সবখানেই ছুটে চলতে হয় তাঁকে। কখনো খবরের ফেরিওয়ালা হয়ে, আবার কখনো শালিসী হয়ে।
 
কাজী এম জমিরুল ইসলাম মমতাজ, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের উজানীগাঁও গ্রামের মরহুম মো. মাহমুদ আলী ও মরহুমা জহুরা খাতুন দম্পতির সন্তান। তাঁর বর্তমান বাড়ী উজানীগাঁও (কাজী বাড়ী) নামে পরিচিত। ইদানিং সাংবাদিক কাজী মমতাজ দ্বারা খুব মানবিক কাজ হতে দেখছি আমরা। যদিও এর আগে অনেক মানবিক কাজের স্বাক্ষী হয়েছি আমি নিজে, সেগুলো সার্বিকভাবে চোখে পড়েনি। কখনো বিয়েতে সাহায্য, বিনে পয়সায় বিয়ে পড়ানো, সাহায্য-সহযোগীতা, ঈদ রোজায় দান করা, মাদ্রাসা মসজিদসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও সহযোগিতা করা ছিলো নৈমিত্তিক কাজ। ছিলো বললে বিষয়টা অতীত হয়ে যায়, মনে হয় এখন আর নেই। এখানে বলা প্রসঙ্গত যে, এসব কাজ কাজী সাহেব দ্বারা এখনো হচ্ছে। এসবের সাথে নতুন করে শুরু হয়েছে খাদ্য নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো। যা খুবই ইতিবাচকভাবে দেখছেন উপজেলাবাসী। প্রশংসিত হচ্ছেন তিনি। আমি আমার কথাই বলি। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সকলের আগেই কাজী সাহেব এক বাক্স ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফলমূল নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে সন্ধ্যে বেলায় আমার বাড়ীর সামনে এসে হাজির। তারপর গেলেন আরও দু’চারজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়ীতে। এরপর আরও ব্যক্তির বাড়ীতে। আমার জানামতে তিনিই প্রথম কোনো ব্যক্তি যিনি উপজেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির বাড়িতে ফলমূল পাঠিয়েছেন, খোঁজ খবর নিয়েছেন এবং নিচ্ছেন। এ তো গেলো করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের কথা। বাকী রইলো বন্যা কবলিত মানুষদের কথা। কোনও রকমের উদ্দেশ্য ছাড়া শুধুমাত্র স্রষ্টার আনুগত্য লাভের আশায় মানুষটি সম্পূর্ণ নিজ আয়ের টাকা দিয়ে শুকনো খাবার নিয়ে ছুটছেন সাঁতারজল ডিঙে মানুষের দরোজায়। পানির নীচে তলিয়ে যাওয়া ঘরবাড়ী দেখে দেখে বাড়ীর অসহায় মানুষদের হাতে তুলে দিচ্ছেন খাবার। খোঁজ খবর নিচ্ছেন তাদের। দাঁড়াচ্ছেন মানুষের পাশে। মানুষকে ভালোবাসেন বলেই হয়তো এমন কাজ তাঁর দ্বারা সম্ভব হচ্ছে। মানুষও তাঁকে ভালোবাসেন বলেই হয়তো মানুষের পাশে যাওয়ার টানটা তাঁর ভিতরে প্রবলভাবে কাজ করে।
 
অনেক সময় মানুষকে অমানুষ হয়ে যাওয়ার কুৎসিত গল্প খবরের কাগজ বা ফেসবুকের পাতায় আমরা পড়ি। আমরা পড়ি জনপ্রতিনিধি হয়ে গরিবের চাল মেরে খাওয়ার গল্প, পড়ি শিক্ষিত হয়ে অশিক্ষিতের চেয়েও গর্হিত কাজের ইতিহাস। এসব আমাদের লজ্জিত করে। যারা এমন হেন কাজের সাথে জড়িত থাকেন কাজী মো. জমিরুল ইসলাম মমতাজ তাদের জন্য একটি অনুপ্রেরণার নাম হতে পারেন। জনপ্রতিনিধি না হয়েও তিনি সেবক।
 
কাজী এম জমিরুল ইসলাম মমতাজ জেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেন। জামেয়া ইসলামিয়া জয়কলস মাখজানুল উলুম ও জামি’আ ইসলামিয়া পাগলা মাদ্রাসা থেকে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ শেষ করে দ্বীনি সিনিয়র মাদ্রাসা, সুনামগঞ্জ থেকে ১৯৯৬ সালে দাখিল ও ১৯৯৮ সালে আলিম সম্পন্ন করেন।
 
পরবর্তীতে যথাক্রমে সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুরস্থ মেরুয়াখলা মমিনিয়া ফাজিল মাদ্রাসা থেকে ২০০০ সালে স্নাতক সমমান ফাজিল ও ২০০২ সালে ছাতকস্থ বুরাইয়া কামিল (এম এ) মাদ্রাসা থেকে স্নাতকত্তোর সমমান কামিল ( এম এ) ডিগ্রি অর্জন করেন। উচ্চ শিক্ষিত এই ভদ্রলোক তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন মহান পেশা শিক্ষকতা দিয়ে। ছাত্রত্ব থাকাকালীন সময়েই ১৯৯৮ সালে শান্তিগঞ্জস্থ হাজী আক্রম আলী দাখিল মাদ্রায় শিক্ষকতা দিয়ে শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন। এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন প্রায় ৪ বছর। ২০০১ সাল পর্যন্ত। শিক্ষতার পাশাপাশি ইমামতিও করতেন এবং সকালে মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণ শিক্ষা কর্যক্রম পরিচালনা করতেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের শিশু ও গণ শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে জড়িত থাকায় ২০০১ সালে নির্বাচিত হন জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হিসাবে।
 
ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত এই মানুষটি দায়িত্ব পালন করেন উজানীগাঁও জামে মসজিদ, উজানীগাঁও বাসস্ট্যান্ড মসজিদ, সুলতানপুর জামে মসজিদ ও শান্তিগঞ্জ আবদুল মজিদ জামে মসজিদ (খণ্ডকালীন)-এর ইমাম হিসেবেও। ২০০৩ সাল থেকে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৬ বছর ছিলেন দামোদরতপী মাহমুদপুর দাখিল মাদ্রাসায় সহকারী মৌলভী হিসেবে কর্মরত। সহকারী মৌলভী পদে চাকুরী চলাকালীন সময়ে ২০০৫ সালে তিনি বিবাহ ও তালাক রেজিষ্ট্রার হিসাবে গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের আইন মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে কাজী পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। ২০০৮ সালের পরে শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে দেন তিনি। এর আগে ১৯৯৪ সাল থেকে টুকিটাকি লেখালেখিও শুরু করেছিলেন। পরে ২০০৭ সালের দিকে দৈনিক উত্তরপূর্ব পত্রিকার মাধ্যমে প্রতিনিধি হিসাবে এই লেখালেখিটাকে পূর্ণাঙ্গ সাংবাদিকতায় রূপদেন তিনি। তিনি বর্তমানে জাতীয় আঞ্চলিক কয়েকটি পত্রিকায় কাজ করে আসছেন। এখন তিনি আমাদের অভিভাবক, প্রেসক্লাবের সভাপতি।
 
রাজনৈতিক জীবনে কাজী মমতাজ ১৯৯৪-২০০২ সাল সময়ে ছিলেন সুনামগঞ্জ সদর ছাত্র মজলিসের সাধারণ সম্পাদক, পরে সভাপতি। ২০০৩ থেকে ২০০৬ সালেও ছিলেন (আল্লামা শায়খুল হাদীস গ্রুপের) বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক, পরে সভাপতি। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত তিনি খেলাফত মজলিসের সভাপতির দায়িত্বে আছেন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা শাখায় । আছেন জেলা কমিটির প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বেও। এছাড়াও আছেন ৫টিরও বেশি সামাজিক, মানবাধিকার ও সাহিত্য সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে। হাজী আক্রম আলী দাখিল মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির শিক্ষানুরাগী সদস্য পদটিও তাঁর দখলে আছে। শুধু তাই নয় সুনামগঞ্জ জেলা কাজী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট বিভাগীয় ম্যারিজ রেজিস্ট্রার সমিতির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বও আছে তাঁর কাঁদে। ‘পদ ভারে ন্যুব্জ’ কথাটিকে উড়িয়ে দিয়ে বীরদর্পে কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিটি সেক্টরে। জয় করছেন মানুষের ভালোবাসা। এজন্য যে তাঁকে বেগ পোহাতে হয়নি তা কিন্তু নয়। কাজী মমতাজ প্রভাবশালী মহলের চক্ষুশূল হয়ে ১৯৯৮ সালে প্রায় ৩ মাস কারাবরণও (হাজতবাস) করতে হয়েছিলো। তবে তিনি (হাজতবাসে) প্রায় ৩ মাস কারাঘারে থাকাবস্থায়ও ইমামতির দায়িত্ব পালন করেছেন। অবশ্য যে অভিযোগে তাঁকে কারাবরণ (হাজতবাস) করতে হয়েছিলো সে অভিযোগ থেকে পরবর্তীতে আদালত থেকে বেখুসুর খালাস পান তিনি।
 
জীবন পুষ্প শয্যা নয়। খুব সহজে জীবনে কোনও কিছুই অর্জন করা যায় না। জীবনকে অনুভব করতে হলে ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা কতে হবে। সবুরের ফল অত্যন্ত সুমিষ্ট হয়। কাজী মমতাজের এমন উপলব্ধি যে, পৃথিবীতে ঠিকে থাকতে হলে ধৈর্য্য ধরে থাকতে হবে। যোগ্যতা মানুষকে তার আপন ঠিকানায় পৌঁছে দেয়। হিংসা মানুষকে অমানুষ করে; ধ্বংস করে; ভিতর থেকে জ্বালিয়ে দেয়। অহংকার মানুষকে পশু করে তোলে। হিংসা আর অহংকার থেকে বেঁচে থাকতে হবে। মানুষের উপকার করতে হবে। মানুষের সেবায় নিঃস্বার্থভাবে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষের সেবা করার পেছনে তাঁর কোনও উদ্দেশ্য নেই। মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় মানুষের সেবায় তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন তিনি। মন থাকলেই যে মানুষের উপকার করা যায়, পাশে দাঁড়নো যায় তিনি সেটাই সকলের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন। আমি শেষ লাইনে আশা করি কাজী মোঃ জমিরুল ইসলাম মমতাজকে দেখে আমাদের সমাজের ভিত্তশালীরা অন্তত সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উৎসাহ পাবেন।
 
_________________
লেখকঃ ইয়াকুব শাহরিয়ার
সাংবাদিক ও শিক্ষক