ত্রাণ দেওয়ার ছবি বা ভিডিও যেন কারো জীবনের কাল না হয়…

প্রকাশিত: ৫:৫০ অপরাহ্ণ, জুন ২৮, ২০২২ 392 views
শেয়ার করুন

দেশ আজ চরম এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে,বিশেষত সিলেট বিভাগ এর বন্যা পরিস্থিতি শত বছরের ইতিহাস কে হার মানিয়েছে। এখানে উচ্চবিত্ত,মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবিত্ত বেশীরভাগই ভিন্নভাবে ভুক্তভোগী। বন্যাকে ঘিরে তরুণ,যুবক কিংবা বৃদ্ধ ভিন্ন শ্রেণী পেশা মহৎ মানুষেরা দিন রাত এক করে কাজ করে যাচ্ছেন ভানবাসী মানুষের জন্য। বিশেষ কৃতজ্ঞতা তাদের জন্য যারা ঢাকা কিংবা অন্যান্য অঞ্চলের হয়ে ও কাজ করে যাচ্ছেন সিলেটবাসীর এই স্মরণকালের ভয়াবহ বিপর্যয়ে পাশে থেকে।

কিন্তু এই মহৎ কাজে কি কারো কোন ক্ষতি করে দিচ্ছি ?

দিনের পর যেমন রাত আসেই সত্য,তেমনি সময়ের সাথে মানুষের সামজিক অর্থনৈতিক পরিবর্তন সত্য।
যেমন আজ যারা সহযোগিতা করছি তাদের অতীত কিংবা পূর্বপুরুষ এর অতীত হয়তো এতটা বর্ণিল আলোকউজ্জল ছিলনা,কিন্তু আজ আমাদের পৃথিবী আলোয় উচ্ছসিত।

টিক তেমনি আজ যারা সহযোগিতা নিচ্ছেন,
তাহারা ও হয়ত এক সময় দিয়েই গেছেন,সময়ের পরিবর্তনে তারা আজ অসহায়,কেউ বাবা হারানো এতিম, কেউ স্বামী হারানো বিধবা,কিংবা সন্তানহীন বৃদ্ধ, অথবা কেউ কাজ হারানো যুবক।

গতকাল ফেসবুকে দেখলাম একটা ফুটফুটে অবুঝ মেয়েকে ত্রাণের ব্যাগ দেওয়া হচ্ছে কেউ একজন ভালো মনের মানুষ পাশে থেকে বলছেন,

ও এতিম বাবা নেই,মেয়েটাকে আরো একটি ব্যাগদাও,দিলও তারা,ধন্যবাদ তাদেরকে।

মেয়েটার নিষ্পাপ চেহারা মনের আমার ক্যানভাসে ভেসে যাচ্চে বার বার ,
সাথে মনে হচ্ছে আমার মেয়েগুলোর কথা,হৃদয় টা কাঁপছে,পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে সকলেই আমরা প্রকৃতির কাছে অসহায়।

কার সন্তান কখন জানি অসহায় হয়ে যায় একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই অবগত।

আচ্চা যে মেয়েটার হাতে এই সাহায্য তুলে দিলেন হয়তো তার ঘরেও কোন যুবতী বোন রয়েছে,যে কিনা ভিডিও বা ভাইরাল ছবিগুলো ফেইসবুকে দেখে বৃষ্টির অঝোর ধারার সে ও কাঁদছে,

মেঘের ফাঁকে আকাশ না দেখা গেলেও আকাশের দিকে তাকিয়ে মনের গহীনের আর্তনাদ সৃষ্টিকর্তার কাছে হয়তো পৌঁছে দিয়ে বলছে,

কেন অসময়ে বাবাকে কেড়ে নিলে,কেন ছোট্র এই জীবনে জন্য অসহায়,গরীবের খাতায় নাম তুলে নিলে ?

হয়তো তাও ভাবছে যেই পরিবারে তার বিয়ের কথা চলছিল ত্রাণের এই ব্যাগ বহনকারী পরিবারের সাথে লোকলজ্জার ভয়ে সম্বন্ধ টিক রাখবে কিনা হবু বরের পরিবার,

না বিয়েটা ভেঙ্গে যাবে ?

নয়ত কোনও যুবতী মেয়ের শশুর বাড়ীর লোকজন আড় চোখে থাকাচ্ছে বাবা,কিংবা মায়ের ত্রাণ গ্রহণের ভাইরাল ভিডিও কিংবা ছবি দেখে।

হয়তো কোনও কিশোরী নিজেকে অভিশাপ দিচ্ছে আর চিন্তা করছে বন্যার পরে কলেজে কিভাবে মুখ দেখাবে সহপাঠীদের বৃদ্ব বাবার সেই ভাইরাল ছবির কথা ভেবে,

নিষ্পাপ নিরুপায় প্রাণগুলো হয়তো অভিশাপ দিচ্ছে নিজেকে,
সাথে হয়তো এই সমাজকেও,

নিষ্পাপ মানুষগুলোর প্রতি সদয় হয়ে যেমন ত্রাণ দিচ্ছেন টিক তেমনি সদয় হয়ে মানুষ গুলোর ছবি প্রকাশ থেকে বিরত কি থাকা যায়না ?

প্রকাশ হউক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার ছবি,ত্রাণ এর ট্রাক কিংবা নৌকা বোঝাই খাবারের ছবি।

একান্তই যখন ছবি প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিচ্ছে তখন ছবি গুলোর মুখ ব্লার করে দিন কিংবা স্টিকার বসিয়ে দেন,রেহাই পাউক নব বিবাহিতা মেয়েটি,
এতিম হওয়া সন্তানগুলো, কিংবা কিশোরী মেয়েটি সহপাঠীর বাঁকা চোঁখ থাকানো থেকে আপনার সহযোগিতার ব্যাগটি কাঁদে নেওয়ার ফলে___

চলুন আরো একটু ভালোবাসা দেখাই নিষ্পাপ নিরুপায় মানুষগুলির প্রতি।

লেখাটি শেয়ার করা যাবে কোনও অনুমতি ব্যাতীত,

সাদেক তাপাদার,
লেখক,
প্যারিস,ফ্রান্স।