নির্বাচনী মাইকের উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ বিয়ানীবাজার পৌরবাসী

মাহবুব জয়নুল মাহবুব জয়নুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৫:০০ অপরাহ্ণ, জুন ১০, ২০২২ 357 views
শেয়ার করুন

পৌরসভার নির্বাচন আগামী ১৫ই জুন । সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রায় শতাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতিদিন ১০০ টি’র অধিক মাইক দিয়ে প্রার্থীদের প্রচার চালানো হচ্ছে। এসব মাইকের উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন পৌরবাসী। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন হার্ট, কান ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীরা।

 

আগামী ১৫ জুন বিয়ানীবাজার পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্টিত হবে। নির্বাচনী প্রচারণায় কদর বেড়েছে ঢাক ঢোল সানাই বাদকদের। তাঁরা গানে গানে প্রার্থীদের ভোট প্রার্থনা করছেন- জনপ্রিয় সুর ও কথা পরিবর্তণ করে গান বাজিয়ে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টায় লিপ্ত। প্রচারণার সময় শুরুর পর থেকে নানাকথা-বাহারি ছন্দ আর ঢোলের তালে সরগরম করে তুলেছেন বিয়ানীবাজার পৌর এলাকা।

বিয়ানীবাজার পৌরসভার আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধি অন্তত: পৌনে ১০০ প্রার্থীর পক্ষে তাদের গানের সুর বেশ উপভোগ করছেন ভোটাররা। অটোরিক্সা-ইজিবাইকের ওপর মাইক লাগিয়ে গ্রাম-গঞ্জে ঘুরে প্রতীক ও প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ার ধরণ নির্বাচনী আবহে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে। আগামী ১৫ জুন বিয়ানীবাজার পৌরসভার নির্বাচন।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচনে ১০ জন মেয়র প্রার্থী, ৫৮ জন সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থী ও ১০ জন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। প্রতিদিন বেলা দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত চলে মাইকিং।

 প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে মাইকে প্রচার চলছে। ২৫৩.২৫ বর্গকিমি (৯৭.৭৮ বর্গ কিলোমিটারের এই বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রান কেন্দ্রই হচ্ছে, বিয়ানীবাজার পৌর শহর, যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষের বসবাস। ঠিক ২ টা থেকেই প্রার্থীদের সর্মথকেরা মাইকিং প্রচারণার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন। অনেক সময় ভিন্ন ভিন্ন প্রার্থীদের একই সড়কে অটো রিক্সায় ৭/৮ টি প্রচারণার মাইক চলে। যদিও জনসাধারণ শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে ওই সময়টুকু দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরতে দেখা গেছে। আর এসব কারণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে পৌর এলাকার ব্যাবসায়ী সহ সাধারণ মানুষ। অতিমাত্রায় শব্দ দূষণে হার্ট, কান ও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীরা রয়েছেন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।

পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬-এ ‘নীরব’, ‘আবাসিক’, ‘মিশ্র’, ‘বাণিজ্যিক’ ও ‘শিল্প’—এই পাঁচ এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিধিমালায় নীরব এলাকায় দিনে (ভোর ছয়টা থেকে রাত নয়টা) ৫০ ডেসিবেল ও রাতে (রাত নয়টা থেকে ভোর ছয়টা) ৪০ ডেসিবেল, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫, রাতে ৪৫, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০, রাতে ৫০, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০, রাতে ৬০ ও শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫, রাতে হবে ৭০ ডেসিবেল। বিধিমালায় শব্দের মানমাত্রা অতিক্রম না করার শর্তে মাইক, অ্যামপ্লিফায়ার ব্যবহার করতে হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেয়ারও বিধান আছে।

পৌর শহরের মাইক ব্যবসায়ীরা জানান, মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর লোকজন দেড়টার দিকে রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় মাইক বেঁধে প্রস্তুত করে রাখেন। দুইটা বাজার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু করে দেন মাইকিং।’

পৌর শহরের মোবাইল ব্যবসায়ী স্মার্ট কম্পিউটার এন্ড টেলিকমের স্বত্তাধিকারী সাদেক হোসেন বলেন, ‘শহরে একটির পর একটি মাইক আসতেই থাকে। এতে কান ঝালাপালা হয়ে যায়। মাইকের যন্ত্রণাদায়ক শব্দের কারণে মুঠোফোনে কথা বলাসহ গ্রাহকদের সাথে কথা যায় না। সকল মেয়র প্রার্থীদের প্রতি আমাদের অনুরোধ, দেশ ঠিকই ডিজিটাল হচ্ছে, আপনারা ও প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ডিজিটাল পৌরসভা গড়ার, দয়া করে ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচারণা করুন এবং মাইকিং এর ব্যবহার সীমিত করুন অথবা বন্ধ করুন’

নাম না প্রকাশের শর্তে দু’জন ব্যক্তি বলেন, নির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থীদের মাইকিং প্রচারণার পাশাপাশি শহরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উচ্চ শব্দে মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা হচ্ছে। রাতে ঘুমানো যায় না। মাথাব্যথা করে। এসব বন্ধে প্রশাসনের পদক্ষেপ প্রয়োজন। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্টসহ কঠোর নজরদারি না হলে এই উপদ্রব থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব নয়।

প্রার্থীরা বলেন, নির্বাচন ১৫ ই – জুন অনুষ্ঠিত হবে। আর বেশি দিন না থাকায় তারা প্রতিদিনই মাইকিং করাচ্ছেন। জনগণের কথা চিন্তা করে নির্বাচন কমিশন মাইকিংয়ের বিষয়ে কোন নীতিমালা করলে তারা মেনে নেবেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আবু ঈসহাক আজাদ বলেন, ‘সহনীয় মাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত শব্দ মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ। মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণে শ্রবণশক্তি লোপসহ উচ্চ রক্তচাপ, মাথাধরা, খিটখিটে মেজাজ, বিরক্তি বোধ, অনিদ্রা, চোখে কম দেখা, হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যাসহ নানা রকম মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়।’

বিয়ানীবাজার পৌর নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারি রিটানিং কর্মকর্তা বলেন, একজন মেয়র প্রার্থীর পক্ষে প্রতিদিন নির্বাচনী এলাকায় ৩ টি ও কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে ১ টি করে মাইকিং করার নিয়ম রয়েছে। তবে নির্বাচনে কত ডেসিবেল শব্দে মাইক বাজানো যাবে এ বিষয়ে কোনো নীতিমালা না থাকায় প্রার্থীদের আমরা মৌখিকভাবে উচ্চ শব্দে মাইক না বাজানোর জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, শব্দ দূষণে মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে নির্বাচনে মাইকিংয় প্রচারনা হয়তো বাদ দিতে পারে নির্বাচন কমিশন।