বিনয় ও নম্রতা মানুষের অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য

প্রকাশিত: ১:৩২ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৭, ২০২২ 392 views
শেয়ার করুন

 

বিনয় মানুষকে উচ্চাসনে সমাসীন ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিত্বে পরিণত করতে সহায়তা করে। বিনয়ীকে মানুষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। যে যত বেশী বিনয়ী ও নম্র হয় সে তত বেশী উন্নতি লাভ করতে পারে। এ পৃথিবীতে যারা আজীবন স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় আসন লাভ করে আছেন তাদের প্রত্যেকেই বিনয়ী ও নম্র ছিলেন। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বিনয়ী ও নম্র মানুষ ছিলেন শেষ নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)। তিনি ছিলেন বিনয় ও নম্রতার মূর্তপ্রতীক। তাইতো মহান আল্লাহ সাক্ষ্য দিয়েছেন এভাবে ‘আর নিশ্চয়ই তুমি সুমহান চরিত্রের অধিকারী’।বিনয় ও নম্রতার বিপরীত শব্দ হ’ল ঔদ্ধত্য, কঠোরতা, অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ ইত্যাদি। এগুলো মানব চরিত্রের সবচেয়ে নিকৃষ্ট স্বভাব। এ পৃথিবীতে মারামারি, কাটাকাটি, খুন-রাহাজানি সহ যত অশান্তির সৃষ্টি হয় তার মূলে রয়েছে ঔদ্ধত্য, অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ ইত্যাদি।‘বিনয় ও নম্রতার মূল হ’ল, তুমি তোমার দুনিয়ার নে‘মতের ক্ষেত্রে নিজেকে তোমার নীচের স্তরের লোকদের সাথে রাখ, যাতে তুমি তাকে বুঝাতে পার যে, তোমার দুনিয়া নিয়ে তুমি তার চেয়ে মর্যাদাবান নও।

আর নিজেকে উঁচু করে দেখাবে তোমার চেয়ে দুনিয়াবী নে‘মত নিয়ে উঁচু ব্যক্তির নিকট, যাতে তুমি তাকে বুঝাতে পার যে, দুনিয়া নিয়ে সে তোমার উপর মর্যাদাবান নয়,আল্লাহর অনুগ্রহে তুমি তাদের প্রতি কোমল হৃদয় হয়েছিলে; যদি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হ’তে, তবে তারা তোমার আশপাশ হ’তে দূরে সরে পড়ত। সুতরাং তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর এবং তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর কাজকর্মে তাদের সাথে পরামর্শ কর। অতঃপর কোন সংকল্প করলে আল্লাহর উপর ভরসা কর।

কোনো মানুষ যখন নিজকে অন্য কোনো মানুষের তুলনায় উত্তম, উন্নত, ক্ষমতাধর কিংবা বড় মনে করে; অথবা কাউকে কোনোভাবে নিজের তুলনায় ছোট বা হেয় মনে করে; তার এই মানসিকতাকে অহংকার বলে। এটি একটি মানসিক অনুভূতি। তবে মানুষের কাজের মাধ্যমে এটার প্রকাশ ঘটে।

সমাজে আমরা এমন বহু রকমের পেশা ও কাজের লোকজনের সঙ্গে এবং বিচিত্র চরিত্রের মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করি, যাদের পারস্পরিক উপলব্ধি বিভিন্ন রকমের। সেজন্য তাদের সম্পর্কে মূল্যায়ন করা খুব সহজ কাজ নয়। ধৈর্য এবং মনোবল ছাড়া এমন মানুষের মাঝে বসবাস করা কঠিন। অহংকারী লোকদের কেউ পছন্দ করে না। সবাই চায়, তাদের আশেপাশের লোকজন মাটির মতো প্রশান্ত মানুষ হোক, মিথ্যা অহংকারমুক্ত ভালোবাসার মানুষ হোক। আর এ কাক্সিক্ষত লক্ষে পৌঁছার পথে প্রতিবন্ধকতা হল অহংকার।
অহংকার এমন এক বদ স্বভাব, যা অন্যদের সঙ্গে পরামর্শ করা কিংবা অন্যের সাহায্য চাওয়ার মানসিকতা পর্যন্ত নষ্ট করে দেয়। এ ছাড়া অহংকারী লোকের আচার-আচরণ, কর্মকান্ড স্বার্থপরতা, ভয় ও ত্রাস সৃষ্টি করে। যার ফলে অন্যদের অধিকার পদদলিত হয়। মঙ্গল ও কল্যাণ অনুভবের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। এমনকি নিজের যোগ্যতা, সামর্থ্য ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মেধার বিকাশ রুদ্ধ হয়ে যায়। তাই তো জ্ঞানীরা বলেন, ‘মেধা ও প্রতিভা ধ্বংসের সহজতম উপায় হলো- অহমিকা।’

বিনয় যেমন মাটির মানুষকে আকাশের উচ্চতায় উঠিয়ে নেয়, ঠিক এর বিপরীতে যশ-খ্যাতি, সম্মান, অর্থসম্পদ, প্রভাব-প্রতিপত্তি, বিদ্যা-বুদ্ধি ইত্যাদি যে কোনো ক্ষেত্রে কেউ যখন সফলতার চূড়া স্পর্শ করে অহংকার করতে থাকে তখন তা তাকে নিক্ষেপ করে আকাশের উচ্চতা থেকে সাত জমিনের নীচে। এক আরবী গল্পে অহংকারের উপমা খুব চমৎকার ফুটে উঠেছে। পাহাড়ের চূড়ায় উঠে কেউ যখন নিচে তাকায়, তখন সবকিছুই তার কাছে ছোট ছোট মনে হয়। নিজের দুই চোখ দিয়ে হাজারো মানুষকে সে ছোট করে দেখে। আবার যারা নিচে আছে তারাও তাকে ছোটই দেখে।

তবে দুই চোখের পরিবর্তে এক হাজার মানুষের দুই হাজার চোখ তাকে ছোট করে দেখছে। অর্থাৎ অহংকার করে একজন যখন সবাইকে তুচ্ছ মনে করে তখন এ অহংকারীকেও অন্য সবাই অর্থাৎ হাজারো মানুষ তুচ্ছ মনে করে।মানুষ সামাজিক জীব। সমাজ ছাড়া মানুষ অচল। সমাজে চলার তাগিদেই মানুষকে বিভিন্ন লেনদেন এবং পারস্পরিক আদান-প্রদান করতে হয় এবং এই আদান-প্রদান বা লেনদেনের ক্ষেত্রেই মানবিক চরিত্রের বহির্প্রকাশ ঘটে। মানব চরিত্রের দুটি দিক রয়েছে ভালো ও মন্দ। মানুষের যে স্বভাবটি প্রাধান্য পায়, ঠিক সে দিকেই খ্যাতি লাভ করে মানুষ। কেউ হয় ভালো মানুষ আর কেউ হয়ে যায় মন্দ। যাদের চরিত্রে উত্তম গুণাবলির সমাবেশ ঘটে, সে হয় স্মরণীয় ও বরণীয়। আর যার চরিত্র মন্দ দোষে দুষ্ট হয়, সে হয় মন্দ ও পরিত্যাজ্য। ইসলাম মানুষকে যেসব ভালো গুণকে আয়ত্ত করার নির্দেশ বা উৎসাহ প্রদান করেছে, বিনয়ী হওয়া বা নম্রতা অবলম্বন করা তার অন্যতম। একজন মুসলিম সবার সঙ্গে সবক্ষেত্রে বিনয়ী আচরণ করবে, নম্রতা হবে তার মুসলিম চরিত্রের অন্যতম দিক।এর আরেকটি অর্থ নিজেকে অন্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে না করা। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের বিনয়ী হওয়ার তৌফিক দান করুন আমিন।