সিলেটের বিয়ানীবাজারে বইছে পৌর নির্বাচনী হাওয়া ঈদের পরই নির্বাচন

প্রকাশিত: ৬:০৯ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৩, ২০২২ 1,105 views
শেয়ার করুন

বেজে উঠেছে বিয়ানীবাজার পৌর নির্বাচনের ঘন্টা ধ্বনি। পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরপরই ঘোষিত হতে যাচ্ছে এই পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল। নির্বাচনের সুরধ্বনি বেজে উঠতেই সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা পুরোদমে নেমে পড়েছেন নির্বাচনী মাঠে। পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট গুলোর গাছে, বাশে ও বিভিন্ন স্থাপনায় দীর্ঘদিন থেকে ঝুলছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রার্থীতার জানান দেয়া ব্যানার-ফেস্টুন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও চলছে পাল­া দিয়ে প্রার্থীদের প্রচারনা। সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সম্ভাব্য প্রাথীদের সরব উপস্থিতি লক্ষনীয়। বিয়ানীবাজারের চায়ের টেবিল ও বিভিন্ন আড্ডায় এখন আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনের আলোচনাই মুখ্য বিষয়।

প্রবাসী অধুষ্যিত বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রাণ কেন্দ্র বিয়ানীবাজার পৌরশহর তথা পৌরসভা। ২০০১ সালে তৎকালিন সদর ইউনিয়ন থেকে পৌরসভায় উর্ত্তীণ হয় এই জনপদ। অতপর দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর বিভিন্ন মামলাজনিত কারনে পৌর প্রশাসকের তত্ত¡াবধানে পরিচালিত হয় এই পৌরসভা। ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় এই পৌরসভার নির্বাচন। একটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ নিয়ে ঝামেলা হওয়ায় স্থগিত করা হয় ঐ কেন্দ্রের নির্বাচন, অতঃপর ৮ মে ২০১৭ইং তারিখে স্থগিত কেন্দ্রের নির্বাচন পুনরায় অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোঃ আব্দুস শুকুর মেয়র পদে বিজয়ী হন। ঐ বছর ২২ মে শপথ গ্রহণ করে নির্বাচিত পৌর পরিষদ এবং ২৩ মে দায়িত্ব গ্রহণ করে। সে হিসাবে ২২ মের পূর্বে পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার আইনী নির্দেশনা রয়েছে। তাই ঈদের পরপরই মে মাসের শুরুতেই এই পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হতে পারে বলে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তাই বিয়ানীবাজারে এখন পুরোদমে বইছে আসন্ন পৌর নির্বাচনী হাওয়া। দীর্ঘদিন থেকে মাঠে থাকা সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে নেমে শুরু করে দিয়েছেন জোরালো তৎপরতা। পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী হতে ইউরোপ, আমেরিকা ও বৃট্রেন থেকে প্রায় হাফ ডজন প্রার্থী বিভিন্ন মাধ্যমে তৎপরতা চালাচ্ছেন। তন্মধ্যে ৪ জন উলে­খ্যযোগ্য প্রার্থী ইতিমধ্যে দেশে এসে পুরোদমে প্রচার-প্রচারনা, লবিং, তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীই বেশী। তারা ভোটারদের পাশাপাশি, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সমর্থন অর্জন এবং জেলা ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সমর্থন আদায়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এদের মধ্যে ২জন দলীয় মনোনয়ন না পেলেও এবার স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণাও দিচ্ছেন। ফলে এবার পৌর নির্বাচনে জমজমাট ভোটের লড়াইয়ের সম্ভাবনায় পৌরবাসী তথা উপজেলার সচেতন মহল আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বেশ কৌতুহলী হয়ে উঠেছেন।

  • জানা গেছে, বর্তমান পৌর মেয়র মোঃ আব্দুস শুকুর এবারের নির্বাচনেও প্রার্থী হতে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। গত নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বিজয়ী মেয়র আব্দুস শুকুর বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। স্থানীয় এমপি ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদের আস্থাভাজন হিসেবে গত ৫বছরের পরীক্ষায় তিনি লেটারমার্কসসহ উর্ত্তীণ। তাছাড়া মেয়র পদের দায়িত্ব পালনে তার আন্তরিক প্রয়াস, বিশেষ করে করোনা মহামারির সময় সর্বমহলে প্রশংসতি মেয়রের ভূমিকা দলীয় মনোনয়ন তথা আসন্ন নির্বাচনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত। তাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে এবার তিনি অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

মেয়র পদে নৌকা মার্কার প্রার্থী হতে তৎপরতা চালাচ্ছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হাজী আব্দুল হাছিব মনিয়া। বর্ষিয়ান এই রাজনীতিবিদ শেষ বয়সে এসে জনপ্রতিনিধি হয়ে পৌরবাসীর সেবা করতে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানিয়েছেন।

এদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে মেয়র পদে নির্বাচন করতে আমেরিকার উন্নত জীবনের মায়া ছেড়ে দীর্ঘদিন থেকে দেশে এসে প্রচারণা চালাচ্ছেন বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের সাবেক জিএস ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মৃত্যুঞ্জয়ী ছাত্রনেতা ফারুকুল হক। ছাত্র রাজনীতির এক সময়ের জনপ্রিয়তা ও ত্যাগকে কাজে লাগিয়ে পৌর নির্বাচনে বাজিমাত করতে চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনি মাঠ। বর্তমান মেয়র ও ফারুকুল হক একই গ্রামের বাসিন্দা হওয়ায় এবং তিনি আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন এই তথ্য ছড়িয়ে পড়ায় তাকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

বিয়ানীবাজার উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহবায়ক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব-ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুছ টিটু আমেরিকা থেকে দেশে এসেছেন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন করতে। তিনিও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন লাভের জন্য জোরালো তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন, পাশাপাশি ভোটারদের সমর্থন আদায়ে জোর প্রচেষ্ঠা চালাচ্ছেন। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও তিনি এবার আর ছাড় দেবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। দল মনোনয়ন না দিলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন। নিজ গ্রামের ঐক্যবদ্ধ সমর্থন পাবেন বলেও তিনি আশাবাদি।

পৌরসভা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ছাত্রলীগের সাবেক তুখুড় নেতা (কানাডা প্রবাসী) আহবাবুর রহমান সাজু। মেয়র পদে প্রার্থী হতে গত ৫ বছরের মধ্যে একাধিক বার দেশে এসে দীর্ঘ সময় জনগণের মাঝে সময় দিয়েছেন। দেশে ও প্রবাসে থাকাবস্থায় বিভিন্ন সময়ে নানা ইস্যুতে তিনি পৌরসভার দরিদ্র মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন সহযোগিতা নিয়ে। বর্তমানে দিনরাত চষে বেড়াচ্ছেন পৌরসভার অলিগলি, করছেন উঠান বৈঠক মতবিনিময়। স্থানীয় নতুন ভোটারদের বড় একটি গ্র“প তার সমর্থনে মাঠে রয়েছে।

এছাড়া আরোও অনেকে নৌকার মনোনয়ন চাইলে উপরোক্ত প্রার্থীরাই রয়েছেন প্রধান সারিতে। তারা সকলেই আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে পূর্ণ আশাবাদি। এজন্য দলের তৃণমূল থেকে শুরু করে হাইকমান্ড পর্যন্ত নানা ভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন তারা। শেষ পর্যন্ত কে পাবেন নৌকার মনোনয়ন তা সময়ই বলে দেবে।

  • মেয়র পদে প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগ ছাড়াও তৎপরতা চালাচ্ছেন জামায়াতে ইসলামী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, সিপিবি ও স্বতন্ত্র অনেক প্রার্থী। অন্যান্য দলের প্রার্থীরা নির্বাচন করলে দলীয় প্রতীকেই করবেন, তবে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েই নির্বাচন করবেন। গত নিবাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নির্বাচন করে ২য় স্থান অর্জন করেছিলেন তৎকালিন পৌর বিএনপির সভাপতি আবু নাসের পিন্টু। এবার বিএনপি দলগত ভাবে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় তিনি নেই নির্বাচনী মাঠে। এছাড়া মেয়র পদে বিএনপির অন্য কোন প্রার্থীকে এখনও নির্বাচনী মাঠে দেখা যাচ্ছে না। জামায়াতে ইসলামী বলয়ের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন থেকে মাঠে রয়েছেন প্রভাষক আব্দুস সামাদ আজাদ। তিনি দীর্ঘদিন থেকে অনেকটা নীরবে ছুটে চলছেন ভোটরদের ধারে ধারে। উচ্চ শিক্ষিত, সজ্জন ও অপেক্ষাকিত ইয়াং প্রার্থী হিসেবে ইতিমধ্যে ভোটার-সমর্থকদের মধ্যে ইতিবাচক ইমেজ তৈরি করতে সক্ষম হচ্ছেন। তবে স¤প্রতি জামায়াতে ইসলামী বলয়ের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আব্দুস সবুর এর নামও আসছে। শেষ পর্যন্ত এই দুজনের মধ্যে যেই নির্বাচন করেন না কেন ভোটের লড়াইয়ে শক্ত প্রার্থী হিসেবেই অবর্তীণ হবেন এবারের নির্বাচনী প্রেক্ষাপট তাই বলছে।

এদিকে মেয়র পদে এবারও প্রার্থী হতে মাঠে রয়েছেন সাবেক পৌর প্রশাসক তফজ্জুল হোসেন। তিনি বিগত নির্বাচনের পর থেকেই ভোটারও সমর্থকদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। বর্তমানে তিনি শারীরিক ভাবে কিছুটা অসুস্থ্য বলে জানা গেছে। তবে শেষ পর্যন্ত যদি তিনি নির্বাচন করেন তবে ভোটের মাঠের এই পাক্কা খেলোয়াড় যে মূল লড়াইয়ে থাকবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফতেহপুর গ্রামের আরেক প্রার্থী অজি উদ্দিন মেয়র পদে নির্বাচন করতে দীর্ঘদিন থেকে বৃট্রেনের প্রবাসী জীবন ছেড়ে দেশে এসে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। ছুটে যাচ্ছেন মানুষের সুখে-দুঃখে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করলে তিনিও শক্ত প্রার্থী হিসেবে আর্ভিভূত হতে পারেন। বাংলাদশের কমিউনিস্ট পার্টি এবার মেয়র পদে প্রার্থী দিতে পারে। কমিউনিস্ট পার্টি বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট আবুল কাশেমের নাম আলোচনায় রয়েছে।

এদিকে ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রায় অর্ধশতাধিক প্রার্থী ও সংরক্ষিত (মহিলা) কাউন্সিলরের ৩টি ওয়ার্ডে ১ ডজন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। তারা ব্যানার, ফেস্টুন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণার পাশাপাশি ছুটছেন পাড়া মহল­ার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের বাড়ি বাড়ি। ভোটারদের সমর্থন আদায়ে অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদিতে। সব মিলিয়ে বিয়ানীবাজার পৌরসভা জুড়ে এখন নির্বাচনী আমেজ বিরাজমান।