দুই বছর পর কুলাউড়া আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি, মিশ্র প্রতিক্রিয়া

লুৎফুর রহমান লুৎফুর রহমান

সম্পাদক ও সিইও, বায়ান্ন টিভি

প্রকাশিত: ২:৩১ অপরাহ্ণ, মার্চ ১, ২০২২ 632 views
শেয়ার করুন

 

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের দুই বছর তিন মাস পর প্রকাশ করা হয়েছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি। ২০১৯ সালের ১০ নভেম্বর দলের ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। সেই কাউন্সিলে পুর্ণাঙ্গ কমিটি এক মাসের মধ্যে করার নির্দেশনা থাকলেও এরমধ্যে অতিবাহিত হয়েছে ২ বছর ৩ মাস। এরমধ্যেই শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নেছার আহমদ এমপি ও সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান স্বাক্ষরিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আর তারপর থেকেই শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়।

৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে আওয়ামীলীগের সাবেক ছাত্রনেতা ও বিগত কমিটির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন ব্যক্তিকে বাদ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও কমিটিতে অনেক জুনিয়র নেতাকে সম্পাদকীয় পদে রাখা হয়েছে। যেটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।  পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সভাপতি হয়েছেন রফিকুল ইসলাম রেনু, সাধারণ সম্পাদক আসম কামরুল ইসলাম, সিনিয়র সহ-সভাপতি একেএম সফি আহমদ সলমান, সহ-সভাপতি রুকন উদ্দন আহমদ, আতাউর রহমান শামিম, শফিউল আলম শফি, অরবিন্দু ঘোষ বিন্দু, সিএম জয়নাল আবেদিন, মনিরুল ইসলাম চৌধুরী, মনসুর আহমদ চৌধুরী, কামাল হাসান। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোরা দে, আব্দুল কাদির, সিপার উদ্দিন আহমদ। তিন সাংগঠনিক সম্পাদক হচ্ছেন প্রভাষক মমদুদ হোসেন, বদরুল ইসলাম বদর ও জামাল হোসেন।

গত ইউপি নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় যাদেরকে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল তাদের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার না করে স্থান দেয়া হয়েছে সেই কমিটিতে। এ নিয়ে তৃণমূল নেতাকর্মীরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে গত ২৮ নভেম্বরের ইউপি নির্বাচনে যারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন এমন ৬ জন ব্যক্তিকে এই কমিটিতে সদস্য পদে স্থান দেয়া হয়েছে। বিদ্রোহীদের বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা ছিলো দলীয় হাইকমান্ডের। কিন্তু কুলাউড়া আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে মানা হয়নি সেই নির্দেশনা। উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের মধ্যে ১০ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বর্তমান কমিটিতে স্থান পেলেও নৌকা নিয়ে বিজয়ী হওয়া কাদিপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাফর আহমদ গিলমানকে কমিটিতে রাখা হয়নি। যারা বাদ পড়েছেন তাদের নিয়ে ক্ষোভ নেতাকর্মীদের মধ্যে।

দলে প্রবাসীদের মধ্যে যুক্তরাজ্য প্রবাসী কামাল হাসান হয়েছেন সহ-সভাপতি, আরেক যুক্তরাজ্য প্রবাসী মোস্তফা আব্দুল মালিক ও ফজল আহমদ ফজলু সদস্য, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তোফায়েল আহমদ হয়েছেন সদস্য ও সৌদি প্রবাসী আশরাফ চৌধুরী শিপু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক পদে স্থান পেয়েছেন।

উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মোঃ আব্দুস শহীদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তৃণমূল পর্যায়ের ত্যাগী নেতাদের নিয়ে কমিটি করার কথা থাকলেও কুলাউড়ায় হয়েছে তার উল্টোটা। যারা উপজেলা সভাপতি-সম্পাদকের তোষামোদি করতে পারবে তাদেরকে এই কমিটিতে রাখা হয়েছে।

উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সদস্য এম এ রহমান আতিক বলেন, দলের ত্যাগী ও সাবেক ছাত্রনেতাদের বাদ দেয়া হয়েছে এটা খুবই দুঃখজনক। জামাত শিবির থেকে অনেককে কমিটিতে স্থান দেয়া হয়েছে। কমিটি গঠনে দলের সভাপতি-সম্পাদক স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়েছেন।

নৌকা নিয়ে বিজয়ী কাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা কৃষকলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাফর আহমদ গিলমান বলেন, উপজেলার ১০ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের কমিটিতে স্থান দেয়া এবং অনেক বিদ্রোহী প্রার্থীকে দলে রাখলেও নৌকা নিয়ে বিজয়ী হওয়ার পরও আমাকে কমিটিতে রাখা হয়নি।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১০ নভেম্বর ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিলে দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেণুকে সভাপতি, যুগ্ম সম্পাদক একেএম সফি আহমদ সলমানকে সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং যুববিষয়ক সম্পাদক আসম কামরুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক, সাবেক এমপি ও দলের সাবেক সভাপতি আব্দুল মতিন এবং সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুক্তাদির তোফায়েলকে সদস্য ঘোষণা করে পাঁচ সদস্যের উপজেলা আওয়ামী লীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা ঘোষনা করেছিলেন আ’লীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন। এরপর তাদের দায়িত্ব দেয়া হয় এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের।