সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নে গ্রেফতারের ভয়ে পুরুষশূন্য কয়েকটি গ্রাম

মাহবুব জয়নুল মাহবুব জয়নুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১১:৫৪ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৯, ২০২১ 636 views
শেয়ার করুন

ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে শুরু হওয়া চলমান ইউপি নির্বাচনের ৪র্থ ধাপের নির্বাচন শেষে হঠাৎ করেই থমকে গেছে সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের চিত্র।

 

নির্বাচন উপলক্ষে এই ইউনিয়নে গত রবিবার(২৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত এই এলাকায় অনেকটা উৎসবের আমেজ থাকলেও ঐদিন রাত থেকে সম্পুর্ন বিপরীত দৃশ্য ধারণ করেছে ফুলবাড়ি ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে।

বিজ্ঞাপন 

ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের বৈটিকর বাজারে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আব্দুস সালাম(৬০) নামে একজনের মৃত্যু হওয়ার পর পুলিশের করা মামলার কারণে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে বৈটিকর বাজারসহ আশপাশের গ্রামগুলো।

 

নিহতের ঘটনায় গত সোমবার (২৭ ডিসেম্বর) রাতে গোলাপগঞ্জ থানার এসআই মহরম আলী বাদী হয়ে ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৪০০ জনকে আসামি করে এ মামলা দায়ের করেন। এছাড়াও  ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

 

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- উপজেলার রফিপুর দক্ষিণ মাইজভাগ গ্রামের তোয়ারিছ আলীর ছেলে ফলিক আহমদ (৩০), রনকেলী দিঘীরপার গ্রামের সাদেক আলীর ছেলে মিরন আহমদ(২৮), ফুলবাড়ি টিকরপাড়া গ্রামের মস্তুর আলির ছেলে আব্দুর রহিম (৩৮) ও একই গ্রামের শফিক আহমদের ছেলে কামরান।

 

জানা যায়, নিহত আব্দুস সালাম উপজেলার লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের দক্ষিণভাগ রামপা গ্রামে। তিনি বৈটিকর বাজারে সাইকেল ও রিকশা মেরামতের কাজ করতেন। থানায় করা পুলিশ এসল্ট মামলার কারণেই গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বৈটিকর বাজারের আশেপাশের গ্রামের পুরুষেরা। এতে করে প্রায় পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে গ্রাম।

 

মামলা হওয়ার পর সরেজমিনে মঙ্গলবার(২৮ ডিসেম্বর) ফুলবাড়ি ইউনিয়নের বৈটিকর বাজারের সবকটি দোকানপাট বন্ধ দেখা যায়। রাস্তার মধ্যে পড়ে থাকতে দেখা যায় ভাঙাচুরা গ্লাস। ইটপাটের কংক্রিট।যা দেখে সহজেয় অনুমেয় হয় দু’দিন আগে রাতের সহিংসতার পরিমাণ।

 

বৈটিকর বাজারস্থ ফুলবাড়ি আজিরিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা এবার ইউপি নির্বাচনের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিলো। কেন্দ্রের আশপাশের এলাকায় থমথমে নিস্তব্ধ পরিবেশ।

 

অপরিচিত মানুষ দেখলেই ভয়ে ঐ স্থান থেকে সরে যাচ্ছেন নারী,কিশোর ও বৃদ্ধরা। ফুলবাড়ি টিকরপাড়া, দক্ষিণ পাড়া, উত্তরপাড়া,হাজিপুর গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, কিছু শিশু,নারী আর বৃদ্ধ ছাড়া পুরো গ্রামই রয়েছে পুরুষ শূণ্য অবস্থায়।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একবৃদ্ধ জানান, শান্ত প্রকৃতির একটি গ্রাম ছিলো আমাদের। কিন্তু ভোটের দিন রাতে বাজারে কেন্দ্রের ফলাফল নিয়ে অসন্তোষ দেখা দেয়।এরপর মাইকে ঘোষণা করে কি থেকে কি হয়ে গেল। আমরা সংঘাত চাইনি। তবুও এই নির্বাচনটি আমাদের জন্যে দুঃস্বপ্নের মত এসেছে।

 

তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালের যুদ্ধকালীন নীরবতা যেন আবার আমাদের গ্রামে ভর করেছে।নিস্তব্ধ দুটি সকাল কাটাতে হয়েছে আমাদের। ঘরের চা পানের জন্য চিনি নেই।ঘরের বাজার সদাই নেই।মামলা হওয়ার পর থেকে সম্পূর্ণ গ্রাম ভয়ে প্রায় পুরুষ শূন্য হয়ে গেছে। নারীরাও ভয় পাচ্ছেন পুরুষশুণ্যতায়।চোর ডাকাতদের আতঙ্ক ও ভয় করেছে তাদের মনে।

 

সালমা বেগম (ছদ্মনাম) নামের এক মহিলা সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে এ প্রতিবেদকের কাছে বলেন, বাজারের ঘটনায় আজ ভয়ে বাড়ির মানুষ বাড়িতে থাকছে না। কখন পুলিশ আসে আর কাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় বলা যায় না। বাড়িতে পুরুষ মানুষ নেই।ঘরের চাল-চুলা বন্ধ। খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।

 

টিকরপাড়ার বাসিন্দা ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ভোটের দিনের সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হওয়ায় এলাকায় গ্রেফতার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।পুরুষ,যুবক সকলেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

 

এদিকে পুলিশও টহল দিচ্ছে, তল্লাশি করছে। তবে স্থানীয় নেতৃবৃন্দ আলোচনা করে থানার ওসিকে জানিয়েছেন নিরপরাধ কাউকে যাতে হয়রানি না করা হয়।প্রকৃত অপরাধীরা যেন আইনের আওতায় আসে সেজন্য অনুরোধও করা হয়েছে।

 

এই বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ হারুনূর রশীদ চৌধুরী বলেন, এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করেছে। ৪জনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।গ্রামে আতঙ্ক থাকাটাই স্বাভাবিক।তবে পুলিশের পক্ষ থেকে কাউকে হয়রানি করা হচ্ছে না।পুলিশ শুধুমাত্র দোষীদের খোঁজে বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।