যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলা: যেভাবে কেটেছে মুসলিমদের দিন

লুৎফুর রহমান লুৎফুর রহমান

সম্পাদক ও সিইও, বায়ান্ন টিভি

প্রকাশিত: ২:১৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২১ 251 views
শেয়ার করুন

 

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও ধৃষ্টতাপূর্ণ হামলা হয় ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। ছিনতাই করা চারটি বিমান দিয়ে এদিন নিউইয়র্ক ও পেন্টাগনে হামলা চালানো হয়। এতে প্রায় চার হাজারের মতো মানুষের মৃত্যু হয়। এটি ইতিহাসে ৯/১১ নামে পরিচিত। সন্ত্রাসী এই হামলার জন্য ওসামা বিন লাদেন নেতৃত্বাধীন আল কায়দাকে দায়ী করা হয়। এ ঘটনার মূল পরিকল্পনা হিসেবে খালিদ শেখ মোহাম্মদকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।

এসব হামলার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মুসলমানরা বর্ণবাদ ও ক্রমাগত ইসলামফোবিয়ার শিকার হচ্ছেন। ২০ বছর ধরে সরকারি গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে রয়েছেন তারা। বহুগুণে বেড়েছে তাদের ওপর মানসিক নির্যাতন ও বিদ্বেষের ঘটনা। ইসলামবিদ্বেষও বেড়েছে। সর্বোপরি যুক্তরাষ্ট্রের অসংখ্য মুসলিম নাগরিকের জীবন বদলে গেছে। গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত আলজাজিরার এক বিশ্নেষণে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

৯/১১-এর পর যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেও আমূল পরিবর্তন হয়েছে। মুসলিম সম্প্রদায়ের অনেকে এসব হামলার পরে মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাদের একজন হলেন হাসান শেখ।

৯/১১-এর দিন সকালে মিশিগানের ডেট্রয়েটের উচ্চ বিদ্যালয়ে বিশ্ব শিক্ষার শ্রেণিতে ছিলেন। প্রথম হামলার পর নির্ধারিত পরীক্ষা নেওয়ার পরিবর্তে তার শিক্ষক শ্রেণিকক্ষের টেলিভিশন চালু করেন, এতে দ্বিতীয় হামলাটি দেখেছিলেন হাসান। তার বয়স এখন ৩৪। তিনি স্মরণ করেন, ‘আমরা শুধু টিভিতে অবাক হয়ে দেখেছিলাম। ওই সব পরিস্থিতির গুরুত্ব তখন আমরা বুঝতে পারিনি।’ হাসান শেখ একজন মুসলমান এবং পাকিস্তানি অভিবাসীর সন্তান। তিনি বলেন, পরবর্তী জীবনে আমাকে পরিস্কার করেছে, এসব ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রে একজন মুসলমান হিসেবে আমার অভিজ্ঞতাকে আমূল বদলে দেবে। তিনি বলেন, বুলিংয়ের শিকার হয়েছি এবং স্পষ্টভাবে বর্ণবাদী মন্তব্যের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছি।

সন্ত্রাসী হামলার এক বছর পর তিনি তার পরিবারের সঙ্গে ওয়াশিংটন ডিসি গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, তখন তার মা হিজাব পরা থাকায় তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে অভিযুক্ত করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন এক ব্যক্তি।

হাসান বলেন, তিনি ও তার পরিবার এমন বহু ঘটনার শিকার হয়েছেন। হাসানের পরিবারই শুধু নয়, এমন বর্ণবাদী আচরণের শিকার হতে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বহু মুসলিম নাগরিককে। ২০০০ সালে মোট ২৮টি এমন ঘটনা ঘটলেও ২০০১ সালে হামলার পর কয়েক মাসে ৪৮১টি বিদ্বেষজনিত অপরাধের ঘটনা ঘটে। ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনের মুসলমান আইনজীবীদের সঙ্গে নীতি পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন সুমাইয়া ওয়াহিদ। তিনি বলেন, ‘৯/১১ হামলার পর বিদ্বেষ ও বৈষম্য বেড়েছে।’ ওই ঘটনার পর প্যাট্রিয়েট অ্যাক্ট পাস করে যুক্তরাষ্ট্র। এ আইনের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অনলাইন ও অফলাইনে ব্যাপকভাবে নজরদারি ও পর্যবেক্ষণ করেন। এরপর থেকে মুসলমানরা সরকারি নজরদারিতে রয়েছেন। যা আগে কখনও হয়নি। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এ আইনের ফলে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন মুসলমানরা।

যুক্তরাষ্ট্রের সিএআইআর পরিচালক বরার্ট ম্যাকও তখন বলেছিলেন, ‘৯/১১ হামলার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সব মুসলমানকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।’ ম্যাকও সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘তাদের প্রার্থনালয়, সুশীল সমাজ, শিক্ষার্থী গ্রুপ এমনকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠাগুলোও ফেডারেল সরকারের নজদারিতে রয়েছে।’