প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২৩১ বিলিয়নের বেশি রেমিটেন্স

লুৎফুর রহমান লুৎফুর রহমান

সম্পাদক ও সিইও, বায়ান্ন টিভি

প্রকাশিত: ১:৩৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৫, ২০২১ 827 views
শেয়ার করুন
স্বাধীনতার ৫০ বছরে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২৩১ বিলিয়নের বেশি রেমিটেন্স যা দেশের উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা ১৬৮ টি দেশে প্রায় ১ কোটি ৪০ লক্ষ প্রবাসী নিরন্তর দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছেন সুতরাং প্রবাসীদের সুযোগ—সুবিধা আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন । এয়ারপোর্ট থেকে শুরু করে স্থানীয় সকল পর্যায়ে প্রবাসীদের জানমালের নিরাপত্তা এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন ।গতকাল রবিবার নিউইয়র্ক শহরে ইউএস বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত অর্থনৈতিক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন ।
নিউ ইয়র্কের ম্যারিয়ট হোটেলে আয়োজিত “স্বাধীনতার ৫০ বছরে প্রবাসীদের অবদান” শীর্ষক এই সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ডক্টর মশিউর রহমান । ইউএস বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি কর্তৃক আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ লিটন আহমদ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর এনআরবি’র চেয়ারপারসন এম এস সেকিল চৌধুরী ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মশিউর রহমান বলেন, প্রবাসীদের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী যে যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে এবং প্রবাসীরা দেশে যে রেমিটেন্স পাঠাচ্ছেন তা দেশের উন্নয়নে এক বিশাল ভূমিকা পালন করছে । তিনি বলেন বর্তমানে প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিটেন্স আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং আমদানি বাণিজ্য ও অথ’ ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করছে সুতরাং প্রবাসীরা তাদের জানমাল সহ সকল বিষয় অগ্রাধিকার পাওয়ার অধিকারী । প্রবাসীদের প্রশ্নের জবাবে মশিউর বলেন, “দেশে বিনিয়োগকারির এবং বিনিয়োগের নিরাপত্তায় কোন ঘাটতি নেই।
দূতাবাস অথবা কন্স্যুলেটে বিনিয়োগ সেল থাকলে প্রবাসীরা সরাসরি এখান থেকেই বাংলাদেশে প্রত্যাশিত সেক্টরে বিনিয়োগ করার সুযোগ পাবেন— এ প্রসঙ্গে মশিউর বলেন, “সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এমন সেল খোলার সম্ভাবনা বিস্তারিত উল্লেখ করে ঢাকায় পাঠালে আমরা তা বিশ্লেষণ করবো। কারণ, একইসঙ্গে অনেকগুলো সেল খুললে কোনটাই হয়তো কার্যকর হবে না, অথচ অর্থ ব্যয় করতে হবে রাষ্ট্রকে।”
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এনআরবি চেয়ারপারসন সেকিল চৌধুরী বলেন গত ৫০ বছরে প্রবাসীরা বৈধ পথে বাংলাদেশের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ২৩১ বিলিয়ন ইউএস ডলারের বেশি অর্থ এছাড়াও তারা নিয়মিত সফরকালে সাথে করে আরো অনেক বৈদেশিক মুদ্রা দেশে নিয়ে যান যা আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতিতে এক বিশাল ভূমিকা পালন করছে ।বিনিয়োগের সুযোগ গুলো সাধারণ প্রবাসীদের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসলে দেশে প্রবাসীদের বিনিয়োগ এবং তাদের অর্থনৈতিক অবদান বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে । তিনি বলেন, আমরা জানি সরকারি নীতিমালায় এ বিষয়গুলোতে নজর দেওয়া হয়েছে, পাশাপাশি নির্বাহী প্রতিষ্ঠানগুলোর এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন । তিনি তার প্রবন্ধ প্রবাসীদের জন্য বিশেষ সহায়তা এবং প্রবাসে এনআইডি কার্ড প্রাপ্তি ও পাসপোর্ট নবায়ন সহজ করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।
সেকিল চৌধুরী বলেন, আমরা মনে করি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যারা বিনিয়োগের ব্যাপারে কাজ করছেন এবং নীতিমালা প্রণয়ন করেছেন তারা এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নিলে প্রবাসীদের প্রচুর বিনিয়োগ দেশে আনা সম্ভব ।বিশেষ করে সাধারণ শ্রেণীর প্রবাসীদের বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য তাদের কাছে তথ্য ও যোগাযোগ বাড়ানো একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সেকিল চৌধুরী বলেন, করোনাকালে বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি কমে গেলেও রেমিটেন্স বেড়েছে এর প্রধান কারণ প্রবাসীরা এই বিপন্ন সময়ে তাদের সকল সঞ্চয় বৈধ পথে দেশে প্রেরণ করেছেন, ইতিপূর্বে হুন্ডির মাধ্যমে এবং যাত্রীদের সাথে যে পরিমাণ রেমিটেন্স দেশে আসতো সেটিও বর্তমান অবস্থায় ব্যাংকের মাধ্যমে আসছে ফলে রেমিটেন্স বেড়েছে ।বিদেশে অবস্থানকারী অনেক বাংলাদেশি বিভিন্নভাবে দক্ষতা অর্জন করেছেন তাদের মেধা ও জ্ঞানকে দেশের স্বার্থে কাজে লাগাবার একটি নিবিড় পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে যাতে করে এই মেধাসম্পদ দেশের কল্যাণে কাজ করতে পারে, আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো বিশেষ করে মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে একটি সমন্বয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন, সবশেষে বলতে চাই দেশে এবং প্রবাসে প্রবাসীদের জানমালের নিরাপত্তা ও সামাজিক সহায়তা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে মিশনগুলো ও স্থানীয় প্রশাসনের অঙ্গগুলোর কায’কর ভূমিকা নেয়া প্রয়োজন । এ সেমিনার আয়োজনে সহযোগিতা করে ঢাকার এনআরবি সেন্টার।
সেমিনারে বক্তব্যকালে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন যুক্তরাষ্ট্র শাখার কমিউনিকেশন্স ডাইরেক্টর বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার বলেন, “এনআইডি কার্ড করতে সশরীরে বাংলাদেশে যেতে পারছেন না অনেক প্রবাসী। অথচ বিনিয়োগসহ সব ক্রয়—বিক্রয়, এমনকি মামলা—মোকদ্দমার সময়েও এনআইডি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তাই যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের কন্স্যুলেটে এনআইডি ইস্যুর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। একইসঙ্গে নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডি.সি. এবং লস এঞ্জেলেস কন্স্যুলেটেও বিনিয়োগের বিশেষ সেল খোলা হলে আগ্রহী প্রবাসীরা স্বস্তি পাবেন।
প্রবাসী আমিনুল ইসলাম খান বলেন, “রেমিটেন্সের মাত্রা অনেক বেশি হবে যদি দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলোকেও বৈধভাবে রেমিটেন্সের আওতায় নেওয়া যায়। তারা প্রতিনিয়ত বিপুল টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন। তবে তা বৈধভাবে সম্ভব হচ্ছে না।” এ প্রসঙ্গে সেকিল চৌধুরী বলেন, “সরকারের তরফ থেকে একটি কমিটি করা হয়েছে। আমিও সচেষ্ট রয়েছি। এ মুহূর্তে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এ মোমেন আফ্রিকায় এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলছেন।”
ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসীদের অভ্যর্থনা—ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর প্রস্তাব দিয়ে আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, “আমাদের সন্তানরা সঙ্গে যায়। এয়ারপোর্টে কখনো হাসিমুখে তাদেরকে স্বাগত জানান না কর্মকর্তারা। বরং ক্ষোভের প্রকাশ ঘটে কর্মকর্তাদের আচার—আচরণে। এর ফলে মা—বাবার দেশে পা রেখেই বিরূপ ধারণায় পতিত হয় প্রবাসের প্রজন্ম। এমন অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে বিনিয়োগের পরিধি বিস্তৃত করার স্বার্থেই।”
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন, যুক্তরাষ্ট্রে সোনালী এক্সচেঞ্জের প্রধান কার্যনির্বাহী দেবশ্রী মিত্র, যুক্তরাষ্ট্রে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সহযোগী পরিচালক ওয়াসেফ চৌধুরী, নিউ ইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সুপারভাইজিং অডিটর ইমতিয়াজ চৌধুরী, নিউ ইয়র্কে ইন্টান্যাশনাল ফাইন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের কার্যনির্বাহী কাজী হেলাল আহমেদ, এসএফ গ্লোবাল হোল্ডিংস—এর পরিচালক নাসিম আলী নিউ ইয়র্কে ডেপুটি কনসাল জেনারেল এস এম নাজমুল হাসান, ওয়াশিংটন ডি.সিতে দূতাবাসের ইকনোমিক মিনিস্টার মেহদী হাসান, জাতিসংঘে মিশনের ইকনোমিক মিনিস্টার মাহমুদুল হাসান, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জিয়া করিম, ইউনিভার্সিটি অব ম্যারিল্যান্ডের স্কুল অব ফার্মেসির সহকারি ক্লিনিক্যাল প্রফেসর ফারজানা মুসাউইস ও সাংবাদিক ফজলুর রহমান।
সেমিনারে বক্তারা এই জাতীয় কার্যক্রম আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাধারণ প্রবাসীদের মাঝে সাথে নিয়ে আয়োজনের আহ্বান জানান সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজক সংগঠনের প্রধান কার্যনির্বাহী ও প্রেসিডেন্ট লিটন আহমেদ। সমাপনী বক্তব্য দেন সংগঠনটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন যুক্তরাষ্ট্র শাখার সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের মিয়া।