যে অন্যের হক নষ্ট করে সে ঈমানদার নয়,বান্দাহর হক আল্লাহ ক্ষমা করবেন না

রেজাউল করীম রেজাউল করীম

ইসলামি সংগীত শিল্পী

প্রকাশিত: ১:১৭ পূর্বাহ্ণ, জুন ৩০, ২০২১ 13,224 views
শেয়ার করুন

 

ইসলামে আমানত রক্ষার প্রতি যেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, তেমনই যে আমানত রক্ষা করে না, মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে, অপরের হক আত্মসাৎ করে, তার জন্যও ঘোষণা করা হয়েছে মারাত্মক ও কঠিন শাস্তির কথা।

প্রিয় নবী (সা.) ছোটবেলা থেকেই আমানতদার ছিলেন। ইহুদি আর খৃষ্টান নেই, সব মতবাদের লোকেরাই তাকে বিশ্বাস করত এবং তার কাছে অতি মূল্যবান আসবাবপত্র গচ্ছিত রাখত।

নবীজির এমন বিশ্বস্ততার কারণেই সবাই তাকে আল আমিন বলে ডাকত। যার অর্থ বিশ্বস্ত ব্যক্তি। মোমিন বান্দার অন্যতম বৈশিষ্ট্যই হল সে বিশ্বস্ত এবং আমানতদার হবে।  এগুণে নবী-রাসুলেরা যেমন গুণান্বিত ছিলেন, তেমনি ছিলেন আখেরি নবীর সাহাবিরাও।

 

পবিত্র কোরআনে বারবার নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে আমানত রক্ষার প্রতি।  আল্লাহ তায়ালা বলেন, তোমরা নিজেদের মধ্যে একে অন্যের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না এবং মানুষের ধন-সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে তা বিচারকের কাছে পেশ করো না।  (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৮)

 

আরও বর্ণিত আছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন,  তোমরা আমানতকে তার মালিকের  কাছে প্রত্যার্পণ করো বা ফেরত দাও।  (সূরা আন-নিসা, আয়াত-৫৮)

 

প্রকৃত ইমানদার হওয়ার আলামত হল আমানত রক্ষা করা।  এ সম্বন্ধে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর (তারাই প্রকৃত মুমিন) যারা আমানত ও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে। (সূরা আল-মুমিনুন, আয়াত-৮)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যদি তোমাদের মধ্যে চারটি জিনিস থাকে, তবে পার্থিব কোনো জিনিস হাতছাড়া হয়ে গেলেও তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

 

আর সেই চারটি জিনিস হলো- এক. আমানতের হেফাজত করা।   দুই. সত্য ভাষণ বা সত্য কথা বলা। তিন. উত্তম চরিত্র। চার. পবিত্র রিজিক বা হালাল উপার্জন।  (মুসনাদে আহমদ)

আরেক হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি তোমার কাছে আমানত রেখেছে, তার আমানত তাকে ফেরত দাও। আর যে ব্যক্তি তোমার আমানত আত্মসাৎ করে, তুমি তার আমানত আত্মসাৎ করো না।

 

ভেবে দেখা উচিত, এই গুণগুলো আমাদের মধ্যে আছে কিনা!  দুনিয়ার লোভে পড়ে কোন্ পাপ কাজটি আমরা করি না। মিথ্যা কথা বলা থেকে শুরু করে আমানতের খেয়ানত পর্যন্ত সবই আমরা করে বেড়াই। লোক ঠকাই। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করি।

অথচ, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যার চরিত্রে আমানতদারী নেই, তার ঈমান নেই। আর যে অঙ্গীকার রক্ষা করে না তার দ্বীন নেই।  (মুসনাদে আহমাদ)।

অন্য হাদিসে তিনি বলেছেন,  মুনাফিকের লক্ষণ তিনটি- যখন কথা বলে মিথ্যা বলে, যখন ওয়াদা করে তখন তা ভঙ্গ করে আর যখন তার কাছে আমানত রাখা হয় তখন সে তার খেয়ানত করে।  (বুখারি, মুসলিম)।

আমানত আত্মসাতকারীর প্রতি কতো কঠিন বাক্য উচ্চারণ হয়েছে।  অন্যের হক নষ্ট করলে দুনিয়ায় যেমন লাঞ্চনা ও অপদস্ততা রয়েছে, তেমন আখেরাতেও রয়েছে কঠিন ও ভয়ংকর রকমের শাস্তি।

হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, কেয়ামতের দিন আমানতের খেয়ানতকারীকে হাজির করে বলা হবে, ‘তোমার কাছে গচ্ছিত আমানত ফিরিয়ে দাও। সে জবাব দেবে, হে আমার প্রভু,  কীভাবে তা ফিরিয়ে দেব? পৃথিবী তো ধ্বংস হয়ে গেছে।

তখন তার কাছে গচ্ছিত রাখা জিনিসটি যেভাবে রাখা হয়েছিল ঠিক অনুরূপভাবে জাহান্নামের সবচেয়ে নিচের স্তরে তাকে দেখানো হবে। অনন্তর তাকে বলা হবে, যাও, ওখানে নেমে ওটা তুলে আনো।

অতঃপর সে নেমে গিয়ে সেটি কাঁধে বয়ে নিয়ে আসবে। তার কাছে জিনিসটির ওজন পৃথিবীর সব পাহাড়ের চেয়ে বেশি মনে হবে। তার ধারণা হবে, তুলে আনলেই সে দোজখের আগুন থেকে নাজাত পাবে।

 

কিন্তু সে যখন জাহান্নামের শেষ প্রান্তে চলে আসবে, তখনই ওই জিনিসটি নিয়ে পুনরায় জাহান্নামের সবচেয়ে নিচের স্তরে পড়ে যাবে। এভাবে সে চিরকালই জাহান্নামে থাকবে।

 

কারো হক বা অধিকার নষ্ট করা, ধ্বংস করা, খর্ব করা ইত্যাদিকে ‘হকতলফী’ বলা হয়। ‘গছব’ মানে অনুরূপ কারো সম্পদ-সম্পত্তি আত্মসাত করা, হরণ করা, জোরপূর্বক বা জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া। অর্থাৎ অন্যায়-জুলুমের মাধ্যমে কারো ন্যায্য অধিকার হরণ করা।

ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সমাজ, জাতি, রাষ্ট্র এমনকি আন্তর্জাতিক- সর্বক্ষেত্রেই অধিকার হরণের অন্ত নেই। ক্ষেত-ফসল, ফলমূল, পানির মাছ, ওষুধ দিয়ে, আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা, সহায়-সম্পদ, ঘরবাড়ি, ভূমি ইত্যাদি অন্যায় ও জোরপূর্বক দখল করা, সবই গছব ও হকতলফীর অন্তভর্‚ক্ত। এসব কার্যকলাপ সমাজে সর্বত্র ব্যাপকভাবে প্রচলিত। এ সম্পর্কে কুরআনের বহু আয়াতে সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে এবং এতদসংক্রান্ত অনেক হাদিসও রয়েছে। সাধারণত হক বা অধিকার দুই প্রকারের- ‘হুকুকুল্লাহ’ বা আল্লাহর অধিকার এবং ‘হুকুকুল ইবাদ’ বা বান্দার অধিকার। এই দ্বিতীয় প্রকারের অধিকারগুলোর মধ্যে মা-বাবার অধিকার সর্বাগ্রে। অর্থাৎ সন্তানের প্রতি যেমন বাবা-মায়ের নানা অধিকার রয়েছে, তেমনি বাবা-মায়ের প্রতিও সন্তানের বহু অধিকার রয়েছে।
এভাবে স্বামী-স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন, বিধবা, এতিম, অসহায়-অভাবী, রোগী, শ্রমিক-মজুর, অতিথি, প্রভৃতি শ্রেণীর পরস্পরের মধ্যে নানা অধিকার রয়েছে। ইসলাম প্রদত্ত এসব অধিকারের বিবরণ কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু অনস্বিকার্য যে, মানবতার দোহাই দিয়ে সর্বত্রই এসব মানবতাবিরোধী কার্যকলাপ দৃশ্যমান। এ সম্পর্কে উদাহরণস্বরূপ কয়েকটি হাদিস নিম্নে দেয়া হলো :
০১. হযরত আবু উমামা বাহেলি (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে মুসলমানের হক অধিকার করছে, আল্লাহ তায়ালা জাহান্নামের আগুন তার জন্য অবধারিত করে রেখেছেন এবং জান্নাত তার জন্য হারাম করেছেন। এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দরবারে আরজ করে, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), যদি সামান্য বস্তু হয়? বললেন, ‘মেসওয়াকের কাঠি সমান হলেও (অতি সামন্য হলেও)।’ (মুসলিম)

 

০২. রাসূল (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি এক আঙ্গুল পরিমাণ জমি অন্যায়ভাবে অর্জন করেছে, কেয়ামতের দিন সে টুকরো ভ‚মির সাত স্তর পর্যন্ত তার গর্দান শিকলবদ্ধ করে দেয়া হবে। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত) বুখারি বর্ণিত হাদিসে আছে, সাত তবক জমি পর্যন্ত তাকে দাবিয়ে দেয়া হবে।
০৩. হযরত আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে আরজ করে, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), আপনার কি অভিমত, যদি কোনো ব্যক্তি আমার কাছ থেকে আমার মাল ছিনিয়ে নিতে চায়? তিনি বললেন : ‘তুমি তাকে দেবে না’। সে বলল, আপনার কী মত, সে যদি আমাকে হত্যা করতে উদ্ধত হয়? তিনি বললেন : ‘তুমি তার সাথে লড়াই করো’। সে বলল, আপনার কী মত, সে যদি আমাকে হত্যা করে? তিনি বললেন : ‘তবে তুমি শহিদ বলে গণ্য হবে’। সে বলল, আপনার কী মত, যদি আমি তাকে হত্যা করি? রাসূল (সা.) বললেন : ‘সে হবে জাহান্নামি, সে অপরের মাল আত্মসাত করার কারণে নিহত হয়েছে। (মুসিলম)।

০৪. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি নিজের মালের হেফাজত করতে গিয়ে নিহত হয়েছে, সে শহিদ। (মুসলিম)।

০৫. হযরত মুখারেক ইবনে সুলাইম (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-এর খেদমতে এসে আরজ করে, যদি কেউ আমার কাছে এসে আমার মাল ছিনিয়ে নিতে চায়? রাসূল (সা.) বললেন : তাকে তুমি আল্লাহকে ভয় করতে বলো।’ সে বলল, লোকটি যদি আল্লাহকে ভয় করে ওই কাজ থেকে বিরত না হয়? রাসূল (সা.) বললেন : ‘তোমার আশেপাশের মুসলমানদের সাহায্য প্রার্থনা করো’।

 

সে বলল, যদি আমার আশেপাশে কোনো মুসলমান না থাকে? রাসূল (সা.) বললেন : সুলতান ও শাসনকর্তার সাহায্য চাও’। লোকটি বলল, সুলতান বা শাসনকর্তা যদি আমার থেকে দূরে সরে যায়? রাসূল (সা.) বললেন : ‘(এমতাবস্থায়) তোমার মালের হেফাজতের জন্য লড়াই করো, এমনকি তুমি শহিদদের অন্তভর্‚ক্ত হয়ে যাবে অথবা তোমার মাল রক্ষা করবে।’ (নাসায়ি)।

 

মাল-দৌলত, সহায়-সম্পদ, যা বৈধভাবে অর্জিত, তা আল্লাহ প্রদত্ত নিয়ামতস্বরূপ, যার হেফাজতের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা উচিত, এতে সওয়াবও রয়েছে। একে বিনষ্ট ও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। মাল-দৌলতের হেফাজত করতে গিয়ে প্রাণ হারালে শহিদের মর্যাদা লাভ করবে। পক্ষান্তরে অন্যায়ভাবে কোনো মাল-সম্পদ গ্রাস করলে এবং ধোকাবাজি ও প্রতারণার মাধ্যমে অর্জন করলে, তা হবে হারাম এবং সে ব্যক্তি হবে জাহান্নামি।

 

মানুষের সঙ্গে যাবতীয় দেনা-পাওনা ও হক পরিশোধ করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অতুলনীয় সুন্নতসমূহের অন্যতম একটি সুন্নত। কোনো মুসলমান প্রকৃত ঈমান এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাবেদারির দাবি করতে পারে না, যদি সে লেনদেন ও হক আদায়ে স্বচ্ছ না হয়। মানুষের সারাজীবন জুড়েই ব্যক্তিগত, পারিবারিক বা সমাজ ও সমষ্টিগত লেনদেন বা দেনা-পাওনার সম্পর্ক বিদ্যমান। জীবনযাপন সংসার সমাজে দেনা-পাওনার বাইরে কেউ থাকে না। যদি কেউ ইচ্ছা করে চাকরি, বাণিজ্য বা ধার-দেনার মতো কোনো কাজে নাও জড়ায়, তবুও তার ওপর উত্তরাধিকারসহ নানা রকম অনিবার্য বিষয় এসেই যায়।
সে ক্ষেত্রেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই সুন্নতটির অনুসরণ তার ওপর আবশ্যক। দেনা-পাওনা ও হক পরিশোধের গুরুত্ব এবং এ বিষয়ে শরীয়তের কঠোরতা নিম্নোক্ত হাদিস থেকে স্পষ্ট অনুধাবন করা যায়। হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন সকল হকদারের হক অবশ্যই আদায় করে দেয়া হবে। এমনকি শিংবিহীন ছাগলের হক শিংওয়ালা ছাগলের কাছ থেকে আদায় করে দেয়া হবে। – সহীহ মুসলিম

 

এ হাদিস দ্বারা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করা যায়, দুনিয়াতে মানুষে মানুষে শুধু নয় কুল মাখলুকাতের মাঝে বিদ্যমান সকল অন্যায় বৈষম্য ও বে-ইনসাফির সমতা বিধান ও সমাধান আখেরাতের আদালতে হবে। কেউ কারও হক নষ্ট করে দুনিয়াতে পার পেয়ে গেলেও আখেরাতে তাকে অবশ্যই পাকড়াও করা হবে এবং সে হক আদায় করা হবে।
হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত অপর একটি হাদিসে এসেছে।

 

 

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যার কাছে তার ভাইয়ের হক রয়েছে, তা মান-সম্মানের হোক বা অন্য কিছুর হোক, সে যেন আজই ক্ষমা চেয়ে নেয় (বা পরিশোধ করে মিটমাট করে নেয়)। এমন দিন আসার আগেই, যেদিন কোনো অর্থকড়ি থাকবে না। যদি ব্যক্তির কোনো নেক আমল থাকে তা দিয়ে পাওনাদারের ঋণ বা হক শোধ করা হবে। আর যদি কোনো নেক আমল না থাকে তা হলে পাওনাদারের বা হকদারের পাপের বোঝা সমপরিমাণ তার মাথায় দিয়ে দেয়া হবে।’ – সহীহ বুখারী

 

 

এই হাদিস নির্দেশ করে হক আদায়ের অনিবার্যতার প্রতি। আমরা অনেক সময় মনে করি, দুনিয়াতে ছোটখাটো দেনা-পাওনা আদায় না করলেও বা করতে না পারলেও তেমন কোনো অসুবিধা নেই। পাওনাদার কয়েকদিন তাগাদা করে পরে এক সময় নিজেই ভুলে যাবে বা হাল ছেড়ে দেবে। সত্যিই এমনটিই ঘটে থাকে। কিন্তু দুনিয়াতে শক্তি বা সুযোগের অভাবে পাওনা আদায় করে নিতে না পারলেও আখেরাতের আদালতে সে তার পাওনা ঠিকই চাইবে, এমনকি যদি সে দুনিয়াতেই ক্ষমা করে দিয়ে না থাকে তবে আখেরাতে তুচ্ছাতিতুচ্ছ বা সামান্যতম দেনা-পাওনার দাবিও সে ছাড়বে না।

 

 

কারণ, সেখানে লেনদেন অর্থ-সম্পদের বিনিময় করার সুযোগ থাকবে না বলে নেক আমল দিয়ে তা পরিশোধ করতে হবে। আর আখেরাতে নেক আমলের চেয়ে প্রয়োজনীয় আর কিছুই হবে না। সুতরাং দুনিয়াতে অর্থ-সম্পদে বা সম্মানের হক ফেরত না পেলেও আখেরাতে হক আত্মসাৎকারীর কাছ থেকে নেক আমল ছিনিয়ে নিয়ে নিজের আমলের পাল্লা ভারী করার সুযোগ কেউ হাতছাড়া করবে না।

 

 

হাদিসে এ কথাও বলা হয়েছে, ঋণখেলাপি বা হক নষ্টকারী ব্যক্তির নেক আমল না থাকলে বা ফুরিয়ে গেলেও তার ছাড় নেই; বরং পাওনাদারের পাপের অংশ তাকে চাপিয়ে দেয়া হবে এবং পাওনাদারকে পাপমুক্ত করা হবে। নাউজুবিল্লাহি মিন যালিক। কত মর্মান্তিক এই হাদিসের ঘোষণা।

 

রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব এটাও একটি আমানত। এরও যথাযথ হেফাজত করতে হবে। মানুষের প্রাপ্য মানুষদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। এখানে খেয়ানত করলেও আল্লাহ তায়ালার কঠিন আজাবে পাকড়াও হতে হবে।

 

হযরত আবু জর গিফারি (রা.) নবীজির কাছে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব কামনা করলে তিনি বললেন, আবু জর, তুমি তো দুর্বল প্রকৃতির লোক। আর এটা হচ্ছে একটি আমানত। কেয়ামতের দিন এটা লজ্জা ও অপমানের কারণ হবে। তবে যে ব্যক্তি এটাকে তার দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং যথাযথভাবে সে দায়িত্ব পালন করেছে তার বিষয়টি ভিন্ন।

 

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা.) ঘোষণা করেছিলেন, আমার রাষ্ট্রের একটি কুকুরও যদি না খেয়ে মারা যায় এর জন্য আমিই দায়ী হব।

 

তিনি রাতের আঁধারে ঘুরে ঘুরে প্রজাদের খোঁজখবর রাখতেন। কেউ অভুক্ত থাকলে নিজের কাঁধে খাবারের বস্তা বহন করে তার বাড়িতে দিয়ে আসতেন।

 

ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলীর (রা.) খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের পরে এক রাতে তিনি বাতির আলোতে রাষ্ট্রীয় কাজ করছিলেন। এমন সময় এক ব্যক্তি বিশেষ প্রয়োজনে তার কাছে এল। আলী (রা.)  সঙ্গে সঙ্গে বাতি নিভিয়ে দিলেন।

তারপরে আগত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলা শুরু করলেন। আগন্তুক কৌতূহলি হয়ে তার কাছে  এর কারণ জানতে চাইলে তিনি জবাব দিলেন, এতক্ষণ আমি সরকারি কাজ করছিলাম। তাই সরকারি তেল ব্যবহার করেছি।

এখন তো ব্যক্তিগত কাজ করছি।  সরকারি বাতি ব্যবহার করলে এটা আমানতের খেয়ানত হবে।

নবি কারিম (সাঃ)এর সাহাবায়ে কেরাম আমাদের আদর্শ। সত্যের মাপকাঠি। আমাদের উচিত, তাদের আদর্শে আদর্শবান হওয়া। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের অনুসরন এবং অনুকরণ করা।  তাহলেই সম্ভব সুন্দর, শৃঙ্খল ও শান্তির একটি সমাজ বিনির্মাণ করা।