ওসি পদায়নে যেখানে মেধা ও যোগ্যতাই মানদণ্ড – সিলেটের এসপি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন

মাহবুব জয়নুল মাহবুব জয়নুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৮:০৯ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৬, ২০২১ 869 views
শেয়ার করুন

থানার ওসি পোস্টিং মানেই রাজনৈতিক তদবির কিংবা অনৈতিক সুবিধার ছড়াছড়ি সাধারনদের মাঝে এরকম ধারনা বহু পুরুনো। তবে পুলিশে নীতি নির্ধারণ পর্যায় থেকে আভ্যন্তরীন স্বচ্ছতার বিষয়টি গুরত্বারোপ করায় এমন ধারনার পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে।

এরই ধারাবাহিকতায় সিলেট জেলায় অফিসার ইনচার্জ পদায়নে অনন্য নজির সৃষ্টি করলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম। জেলায় যোগদান করার দুই বছরের মধ্যে সবকটি থানায় তিনি পর্যায়ক্রমে নতুন ওসি পদায়ন করেন।যোগদানের দুই মাসের মধ্যে গোয়াইনঘাট,কানাইঘাট,জৈন্তাপুর,জকিগঞ্জ এবং ওসমানীনগর থানায় নতুন ওসি পদায়ন করে।

 

পরবর্তীতে বিভিন্ন ধাপে কোম্পানীগঞ্জ,গোলাপগঞ্জ,বিয়ানীবাজার,বিশ্বনাথ থানায় ওসি পদায়ন করেন। সর্বশেষ ২২ জুন পর্যটন এলাকা খ্যাত সিলেট জেলার গুরুত্বপূর্ণ গোয়াইনঘাট থানায় ওসি পদায়ন করেন। এসব থানায় ওসি পদায়নে পুলিশ সুপার ইন্সপেক্টর পদের কর্মকর্তাদের মেধা,বুদ্ধিমত্তা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী,সার্ভিস রেকর্ড, অতীত অভিজ্ঞতার মানদন্ড যাচাই করে সম্পূর্ন স্বচ্ছতার সহিত রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত থেকে ওসি পদায়ন করেন।

এই প্রক্রিয়ায় ওসি পদায়ন হওয়া কর্মকর্তারা অফিস আদেশ হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা অনেকেই ভাবতে পারেনি যে নির্দিষ্ট থানার ওসি হবে।এতে একদিকে যেমন মেধাবী এবং অতীতের সার্ভিস রেকর্ড যাদের ভাল তারা মূল্যায়িত হচ্ছে পাশাপাশি এরকম স্বচ্ছ প্রত্রিয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত হয়ে ওসি পদায়নের সুফল প্রতিটি থানার প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ পর্যন্ত পেতে শুরু করছে।

ইতোপুর্বে মামলা রেকর্ড,জিডি এন্টিতে থানায় অনৈতিক প্রস্তাবের অভিযোগ শুনা গেলেই বর্তমানে এরকম অভিযোগের সংখ্যা শূন্যের কাছাকাছি ।সম্প্রতি অফিসার ইনচার্জ হিসেবে পদায়ন হওয়া বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ গাজী আতাউর রহমান এবং বালাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ নাজমূল ইসলামের সাথে কথা বলে জানা যায়,ওসি পোস্টিং অর্ডারের আগ পর্যন্ত তারা বিষয়টি আঁচ করতে পারেনি।

দুজনেই দাপ্তরিক কাজে পুলিশ সুপারের অফিসে এসে জানতে পারে তাদের অফিসার ইনচার্জ হিসেবে পোস্টিং হয়েছে। গোয়াইনঘাটের অফিসার ইনচার্জ হিল্লোল রায় জানান যে পূর্বে আমি গোয়াইনঘাট থানা তদন্ত পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলাম ফেসবুকের মাধ্যমে আমি জানতে পারি আমাকে বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে প্রদান করা হয়েছে।

একই রকম কথা শুনালেন গতকাল গোয়াইনঘাট থানার ওসি হিসেবে আদেশ পাওয়া পুলিশ পরিদর্শক পরিমল দেব। তিনি জানান পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে তিনি পেশাদারিত্বের সহিত ফেঞ্চুগঞ্জ থানায় দায়িত্ব পালন করে আসছেন। হঠাৎ করে গোয়াইনঘাট থানার মত গুরুত্বপূর্ণ থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে পোস্টিং হবে ভাবতে পারেননি। সম্পূর্ন স্বচ্ছ এবং রাজনৈতিক তদবির ব্যতিত গুরুত্বপূর্ণ থানার ওসি হিসেবে পদায়ন করায় তিনি পুলিশ সুপার এবং সিলেট রেঞ্জের ডিআইজির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। যার ফলে সিলেট জেলার অন্যান্য অফিসারদের মধ্যে ভালো কাজ করার সুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে ‌।

জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম বলেন,বর্তমান আইজিপি স্যার বাংলাদেশ পুলিশ কে আধুনিক এবং জনবান্ধব বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে পুলিশের আভ্যন্তরীন দুর্নীতি বন্ধ করে সম্পূর্ন স্বচ্ছতার সহিত পদোন্নতি এবং পদায়নের উপর গুরত্বারোপ করেছেন।ওসি পদায়নে যেখানে মেধা ও যোগ্যতাই মানদণ্ড।

তিনি আরো বলেন, আইজিপি স্যারের এরকম ভিশন বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে আমি মাননীয় রেঞ্জ ডিআইজি স্যারের পরামর্শ্যক্রমে কোন রকম অনৈতিক তদবির বিবেচনায় না নিয়ে সম্পূর্ন স্বচ্ছতার সহিত প্রতিটি থানায় অফিসার ইনচার্জ পদায়ন করছি। এতে থানায় সেবা প্রত্যাশী সাধারন জনগন হয়রানী মুক্ত এবং অনৈতিক সুবিধা প্রদান ব্যতিরেকে নির্বিগ্নে সেবা নিতে পারছে।